ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের শতবর্ষী হিজল বাগান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। চাষাবাদের অজুহাতে গত ১০ বছরের ব্যবধানে এ বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছ কৌশলে কেটে ফেলা হয়েছে। দখলদারদের কবল থেকে হিজল বাগানটি রক্ষা করতে জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গোপনে গাছ কেটে ফেলাসহ বাগানের মাটি বিক্রি করছিল একটি চক্র। এতে করে হিজল বাগানের সৌন্দর্য বিলীন হওয়ার পাশাপাশি গোচারণ ভূমিও বিনষ্ট হয়েছে। সপ্তাহ দু-এক আগে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী হিজল বাগানের অধিকাংশ জায়গা দখল করে বোরো ফসল ফলানোর জন্য ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ শুরু করলে প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী। এতে দখলচেষ্টাকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেয়। পরে এ বিষয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে মেহেদী হাসান ডালিসহ ২১ ব্যক্তি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগ ও পাইকুরাটি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে ৯৩ নম্বর দাগে ৮৩ দশমিক ৮০ একর পরিমাণ ভূমি রয়েছে। এ জমির পুরোটাজুড়েই ছিল হিজল বাগানের বিস্তৃতি। তবে ওই জমি থেকে ৩ দশমিক ৬০ একর কয়েকজন ভূমিহীনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী চাষাবাদের নামে হিজল গাছ কেটে বাগানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
এদিকে গ্রামবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে অভিযোগকারীদের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিকালে অভিযুক্ত শফিকুল বলেন, তিনি যে জায়গায় চাষাবাদ করেন সেটি তাঁর চাচা দুলাল ও রেহানের কাছ থেকে নিয়েছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। এ ছাড়া অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের ভাষ্য, সুনই মৌজার ওই দাগে তাদের সম্পত্তি রয়েছে। তাই তারা দখলে আছেন।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, হিজল বাগানের গাছগুলোর গুঁড়ি ঘেঁষে ট্রাক্টর দিকে চাষাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি মাটি দিয়ে ঢেকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাগানের কিছু জায়গায় মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
আলাপকালে সুনই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব হাকিম উদ্দিন জানান, তিনি ৫০ বছর ধরে এখানে গরুর রাখাল হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর চোখের সামনে বাগানের গাছ কেটে ফেলা ও মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
আনোয়ার মিয়া নামে আরেকজন কৃষক বলেন, দখলদারেরা জমি আবাদ করার সময় প্রথমে বাগানের গাছের গোড়ায় বেশি করে সার দেয়। পরে গাছটি মরে গেলে তারা সরিয়ে ফেলে। এভাবেই দিন দিন বাগান উজাড় করা হয়েছে।
আমিরুল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে পাখির বিচরণ কমেছে। এক সময় এখানে হিজলের পাশাপাশি আরও অনেক গাছ ছিল। তা আজ বিলীন হয়ে গেছে।
অভিযোগকারী মেহেদী হাসান ডালি বলেন, ভূমিহীনদের জায়গা চিহ্নিত করে হিজল বাগানের বাকি জায়গা পুনরুদ্ধার এবং সেখানে নতুন করে হিজল গাছের চারা রোপণ করা হোক; যাতে করে বাগানটি হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায়।
পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ইকবাল বলেন, একটি দখলবাজ চক্র বাগানটি ক্রমশ দখলে নিচ্ছে; যার কবল থেকে বাগানটি রক্ষা করা জরুরি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেখা গেছে ওই দাগে কয়েকজন ভূমিহীনকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আবার এসএ রেকর্ডের মালিকের কাছ থেকে হস্তান্তর মূলে জায়গা পেয়েছেন; যারা কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তাদের দাবি, তারা পূর্বপুরুষদের আমল থেকে জমি দখলে আছেন। কতটুকু জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে এবং কতটুকু জায়গা বন্দোবস্তের বাইরে আছে তা যাছাই করা হবে।