ঢাকা   মঙ্গলবার
২৬ নভেম্বর ২০২৪
১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উন্নয়নের অজুহাতে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষনিধন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

উন্নয়নের অজুহাতে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষনিধন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা এবং মানুষের আর্থসামাজিক সুরক্ষার জন্য উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলায় সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশে নানা জাতের বৃক্ষ রোপণ করেছিল বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু বিভিন্ন উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে এসব গাছ। এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশের বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু গাছে লাল চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে কাটার জন্য।    

বেতাগী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সবদার চান মুন্সীর মাজার থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের রেইনট্রি, আকাশমণি, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল। তবে সারি সারি সেসব গাছের বেশির ভাগ এখন নেই। শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই পাশে কয়েকটি আকাশমণি গাছ এখনও দাঁড়িয়ে আছে। 

একইভাবে উপজেলার বুড়া মজুমদার ইউনিয়নের বদনীখালী বাজারে গোলাম সবুর টুলু পার্ক থেকে কনারখাল পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে লাগানো বহু গাছ কাটা পড়েছে। জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে  দরপত্র আহ্বান করে এসব গাছ বিক্রি করে বন বিভাগ। এখনও অনেক গাছে লাল রঙের নম্বর দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব গাছ কাটার জন্যই দেওয়া হয়েছে লাল চিহ্নিত নম্বরগুলো। 

জানা গেছে, বেতাগী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দাসবাড়ি থেকে সদর ইউনিয়নের বাসন্ডাপুলের হাট ৪ কিলোমিটর সড়ক, কাজীরহাট মহাসড়ক থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে জলিসা ইউপি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক, বদনীখালী খেয়াঘাট থেকে কাউনিয়া খেয়াঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক ও বদনীখালী থেকে চরখালী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছে লাল রঙের নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে কাটার জন্য। গাছগুলো কবে কাটা শুরু হবে– এমন প্রশ্নে উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে গাছ কাটা শুরু হবে। এ জন্য এক-দেড় বছর সময় লাগতে পারে।

উপজেলা বন বিভাগ জানিয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮০ কিলোমিটার সড়কে সামাজিক বনায়নের আওতায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে উন্নয়নের প্রয়োজনে ৫০ কিলোমিটার সড়কে সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবশ্য সামাজিক বনায়নের বিধিমালা অনুযায়ী, অংশীদারিত্বমূলক বনায়নের সর্বনিম্ন বয়স ১০ বছর, সর্বোচ্চ ২০ বছর। কিন্তু যেসব গাছ কাটা হয়েছে, সেগুলোর বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের বেশি। ফলে এগুলো এখন কাটতেই হবে। 

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত উপজেলা এনজিও-বিষয়ক সন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, সামাজিক বনায়নের এই নীতি থেকে বন বিভাগের বেরিয়ে আসা দরকার। এ রকম মুনাফাকেন্দ্রিক নীতি শেষ পর্যন্ত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানোর দিকে নিয়ে যায়। পরিবেশ, প্রকৃতির কথা চিন্তা করে সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে দেশীয় ঔষধি, বনজ ও ফলদ গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে গাছ না কেটে উপকারভোগী ও বন বিভাগ দু’পক্ষই লাভবান হতে পারে। 

বেতাগী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিধিমালা অনুযায়ীই গাছগুলো কাটতে হবে। রাস্তায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গাছ লাগানো হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের পরিচর্যা করেছেন। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী, গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগী ৫৫ ভাগ, বন অধিদপ্তর ১০ ভাগ, ভূমির মালিক হিসেবে সওজ ২০ ভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ ৫ ভাগ পাবে। বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে আবার বনায়ন করা হবে।

সড়কে গাছ কাটা বিষয়ে বেতাগীর ইউএনও ফারুক আহমদ বলেন, এই বিষয় বন বিভাগের দায়িত্বে। তবুও মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। 

সর্বশেষ