ঢাকা   মঙ্গলবার
২২ এপ্রিল ২০২৫
৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

সুপেয় পানির অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সুবর্ণচরের লাখ লাখ মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১০:০৫, ২০ এপ্রিল ২০২৫

সুপেয় পানির অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সুবর্ণচরের লাখ লাখ মানুষ

নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর উপজেলায় সুপেয় পানির অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চলছে প্রচণ্ড তাপদাহ, গত সাত মাস ধরে চরাঞ্চালে নেই বৃষ্টি এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া চরের গভীর- অগভীর নলকূপে উঠছে না পানি। 

পুকুর, খাল- বিল ও ডোবাগুলোতে পানি না থাকায় গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারসহ পশুপাখির পানির প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে। মাইলের পর মাইল হেঁটে এক কলসি পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।

এ অবস্থায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে দুই সপ্তাহ ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ক্যারিয়ারের মাধ্যমে প্রতিদিন উপজেলার আট ইউনিয়নে এবং এর পাশাপাশি গত এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাগরিকাও ওয়াটার ক্যারিয়ারের মাধ্যমে সুপেয় পানি মানুষের মধ্যে বিতরণ করছে।

জানা যায়, গত কয়েক বছরে ধরে এ এলাকার কৃষকরা রবিশস্য ছেড়ে বোরো ধান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। শুষ্ক মৌসুমে ধান আবাদই এখন সুবর্ণচরের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সুবর্ণচরের চাষাবাদের জন্য ২৪৫টি গভীর নলকূপের (সেচপাম্প) অনুমোদন দিয়েছে। এর বাইরে কৃষকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অননুমোদিত আরও ৩ হাজারের বেশি এক থেকে দেড় হাজার ফুট গভীরে সেচ পাম্প স্থাপন করেছে। প্রতিটি গভীর নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার ৮০০ কিউসেক পানি উত্তোলন করছে কৃষক। ধান চাষে ভূগর্ভস্থ থেকে পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উঠছে না পানি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সুবর্ণচরে চলতি মৌসুমে শুধু ১৮ হাজার হেক্টর ভূমিতে বোরো ধান এবং ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর ভূমিতে খেসারিসহ অন্যান্য রবি ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এই বোরো ধান চাষে ৫০ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ২৮০ কিউসেক পানি খরচ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৪ লাখ ১৪০ কিউসেক পানি খরচ হচ্ছে ধান চাষে । সেচ চাহিদার মাত্র ২০ ভাগ পানি ব্যবহার হচ্ছে উপরিভাগ থেকে। বাকি পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সেচ কম লাগে এমন লাভজনক ফসল উৎপাদনে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পানি সংরক্ষণে প্রাকৃতিক পানির আধার সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সুবর্ণচরে সুপেয় পানির জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গত প্রায় ২ হাজার ৭০০ নম্বর হ্যান্ড- পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ ও ৩০০ সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ভূগর্ভ থেকে ৪০-৫০ ফুট পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এসব গভীর নলকূপে পানি উঠছে না।

অন্যদিকে অতিরিক্ত খরার কারণে পুকুর, খাল ও ডোবাগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকট তীব্রতর হয়েছে। সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিন ১৩ হাজার লিটার সুপেয় পানি সুবর্ণচরে বিতরণ করা হচ্ছে। এ সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে