ঢাকা   সোমবার
১০ মার্চ ২০২৫
২৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ রমজান ১৪৪৬

তীব্র নাব্য সংকটে নৌকা চলাচল বন্ধ, কৃষিপণ্য পরিবহন নিয়ে ভোগান্তিতে কৃষকরা

agri24.tv

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৭:৩৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

তীব্র নাব্য সংকটে নৌকা চলাচল বন্ধ, কৃষিপণ্য পরিবহন নিয়ে ভোগান্তিতে কৃষকরা

চলতি শুষ্ক মৌসুমে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে ব্যাপক নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এরই মধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি নৌরুট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কৃষিপণ্য পরিবহন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষক। ভোগান্তি বেড়েছে এসব রুট দিয়ে চলাচলকারীদেরও। 

জানা যায়, কয়েক বছর ধরেই সারিয়াকান্দিতে বছরে ছয় মাসের বেশি সময় যমুনা নদীতে নাব্য সংকট থাকে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে যমুনা তার গতিপথও পাল্টেছে। নদীর মূল স্রোত এখন চালুয়াবাড়ী ও কাজলা ইউনিয়নের পূর্ব সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কর্ণিবাড়ি ও বোহাইল ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানা দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা। এ চার ইউনিয়নের পশ্চিমে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর এবং বগুড়া জেলা সদর অবস্থিত। তাই দুটি ইউনিয়নের পশ্চিমে বিশালাকৃতির চরের সৃষ্টি হয়েছে এবং নাব্য সংকট বিরাজ করছে। নাব্য সংকটের জন্য উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলতাফ আলীর খেয়াঘাট, হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া ও নিজবলাইল খেয়াঘাট এবং চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নৌঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় এক মাস ধরে এসব রুটে নৌকা চলাচল করছে না। 

স্থানীয়রা জানান, এসব রুটে নৌকার পরিবর্তে এখন কৃষক ঘোড়ার গাড়িতে করে বেশি ভাড়া দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ হেঁটে ঘাড়ে করে অনেক কষ্টে কৃষিপণ্য বা পশুখাদ্য পরিবহন করছেন। আবার নদীজুড়ে অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ডুবোচরে চলন্ত নৌকা আটকে যাওয়া এখন নিত্যকার ঘটনা। 

কাজলার জামতৈল চরের বাসিন্দা কৃষক রুস্তম আলী বলেন, আমাদের এখানকার মানুষের সংসার চলে ধান, চাল, মরিচ, শাকসবজি সারিয়াকান্দি সদর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে। আমরা সব সময় নৌকায় করে এসব পণ্য বাজারে নিই। এবার এক মাস হলো নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে নদীতে। তাই আমাদের ঘোড়ার গাড়িতে করে পণ্য নিতে হচ্ছে। ফলে খরচ পোষাতে পারছি না। এক মণ পণ্যসহ নৌকা ভাড়া লাগত ৬০ টাকা, ঘোড়ার গাড়িতে লাগছে ১২০ টাকা। 

কাজলার চরের ঘোড়ার গাড়ি চালক মোমিনুল ইসলাম বলেন, নৌকায় করে বেশি মালপত্র নিয়ে যাওয়া যায়, ভাড়াও কম লাগে। ঘোড়ার গাড়িতে বেশি মালপত্র নেওয়া যায় না, আবার ভাড়া একটু বেশি লাগে।     আলতাফ আলী নৌঘাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে পানি না থাকায় অন্যান্য ঘাটের নৌকা চলাচল এক মাস আগে থেকে বন্ধ। তবে তিনি কোনমতে নৌকা চলাচল সচল রেখেছিলেন। কিন্তু পানি একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় ১৫ দিন আগে নৌঘাট বন্ধ করতে বাধ্য হন। 

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপহসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আছাদুল হক বলেন, কয়েকটি অতিগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ড্রেজিং করে নৌচলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তবে পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় অন্য রুটগুলো বন্ধ হতে পারে।

এদিকে সারিয়াকান্দিকে নদীবন্দর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম নৌপথ সৃষ্টি করে নাব্য সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। সারিয়াকান্দির ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, সারিয়াকান্দিকে নদীবন্দর করার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প প্রণয়ন সফল হলে যমুনা নদীতে ড্রেজিং শুরু করা হবে। তাতে সারিয়াকান্দিতে কিছু নৌরুট চালু হবে আবার।