বাঞ্ছারামপুরে তিতাস নদীর ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় কয়েকশ অবৈধ ঘের করায় নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা ব্যাহত হচ্ছে। খরস্রোতা নদীটি অনেক স্থানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ঘের তৈরি করে নির্বিচারে রেণুসহ বিভিন্ন মাছ শিকার চলছে।
দীর্ঘদিন ধরে নির্বিচারে মাছ শিকার করলেও স্থানীয় প্রশাসন ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নদীতে অবৈধ ঘের তৈরির কারণে কচুরিপানা আটকে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নৌপথ বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে স্থলপথে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঘেরের কচুরিপানা পচে নদীর পানি দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ায় তিতাসপাড়ের মানুষ গোসল, রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ করতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির লোক নদীতে অবৈধ ঘের নির্মাণ করছেন এবং চিকন ফাঁসের জাল দিয়ে ঘের থেকে মাছ নিধন করছেন। নদীতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে ঘের নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এক সময় এই নদীতে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন এসব ঘের নির্মাণ করত। এখন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি এসব ঘের দিয়ে মাছ শিকার করছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মেঘনা নদী থেকে তিতাস নদীটি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কালিকাপুর, জয়কালীপুর এবং পাশের নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবেশ করেছে। তিতাসের পূর্বপাড়ে নবীনগরের ছলিমগঞ্জ পার হয়ে বাঞ্ছারামপুরের আকানগর, তেজখালী হয়ে দরিকান্দিতে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে তিতাস নদীটি। এক অংশে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে দরিকান্দি ইমামনগর, বিটিবিশারা, গঙ্গানগর, তাতুয়াকান্দি, পাইকারচর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর অংশটি দরিকান্দি থেকে খাল্লা, বাহাদুরপুর, কাঞ্চনপুর, বাঞ্ছারামপুর, কমলপুর হয়ে হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দির পাশ দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। উপজেলার তিতাস নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫০০ অবৈধ ঘের রয়েছে। প্রভাবশালীরা নদীতে গণহারে ঘের নির্মাণ করে মাছ শিকার করছে। মাছ শিকারে ঘের মালিকরা একেবারেই ঘন (চিকন ফাঁস) জাল ব্যবহার করছেন। এসব জাল থেকে কোনো (আধা সেন্টিমিটারের কম) ধরনের মাছই বের হতে পারে না। যার ফলে ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি পোনাও ধরা পড়ছে ঘের মালিকদের ফাঁদে।
ফরদাবাদ গ্রামের শাহআলম বলেন, ‘আমাদের তিতাস নদীতে আগে বড় বড় লঞ্চ, মালবাহী স্টিমার চলত। এখন তো ঘের কচুরিপানা ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে তিতাস নদীতে নৌকা চলাচল কষ্টকর হয়ে ওঠে। সময়ের ব্যবধানে আজ নাব্য হারিয়ে ক্রমেই মরা খালে পরিণত হচ্ছে তিতাস। নদীর এই নাব্য হারানোর নেপথ্যে নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা অন্যতম কারণ।’
উজানচর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিতাস নদী ছিল আমাদের গর্ব। অবৈধ মাছের ঘেরের কারণে নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা ব্যাহত হচ্ছে, পলিমাটি জমে নদী ভরাট হচ্ছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদীতে এভাবে মাছ ধরছে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদা আক্তার জানান, এসব অবৈধ মাছের ঘের তিনিও দেখেছেন। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে অবৈধ ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।