ঢাকা   মঙ্গলবার
২৬ নভেম্বর ২০২৪
১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দূষণের নির্দেশক গেছো শামুক বিলুপ্তির পথে

agri24.tv

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ৯ নভেম্বর ২০২৪

দূষণের নির্দেশক গেছো শামুক বিলুপ্তির পথে

কোনো এলাকায় যখনই বায়ুদূষণ কিংবা কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন সেখান থেকে হারিয়ে যেতে থাকে ‘গেছো শামুক’। এ কারণে প্রাণীটিকে পরিবেশ দূষণের নির্দেশক বলা হয়। তবে এই শামুক এখন বিলুপ্তির পথে। বন ধ্বংস ও ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে টিকে থাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গেছো শামুক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও জাপানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চলে। রাঙামাটির হাতিপাড়া, সাপছড়ি, ওয়াগ্যাছড়ি, পাগলীপাড়া, বড়ইছড়ি, বিলাইছড়ি এলাকা, বান্দরবানের রেঁইচা, রমতিয়া, ক্রাউপাড়া, বাজালিয়া এলাকা এবং খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মানিকছড়ি, সিন্দুকছড়ি, মাইসছড়ি, লেমুছড়ি, কেঙ্গালছড়ি, কালাপাহাড় এলাকার গেছো শামুক নিয়ে গবেষণা করা হয়।

গবেষকরা জানান, গেছো শামুক ‘এম্ফিড্রমাস’ প্রজাতির একটি প্রাণী। এটি প্রকৃতির নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। তাই এই প্রাণী ‘ফ্লাগশিপ স্পিসিস’ হিসেবে পরিচিত। গাছে বসবাস করে বলে একে গেছো শামুক বলা হয়। তাদের প্রজনন প্রক্রিয়াও ঘটে গাছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ প্রাণী প্রকৃতির জন্য উপকারী। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতির দূষণের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে গেছো শামুক। একসময় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া প্রায় সব এলাকায় এই শামুক বাস করত। তবে নানা প্রতিকূলতার কারণে বর্তমানে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলেই দেখা মেলে। দেশের সমতল অঞ্চল থেকে গেছো শামুক হারিয়ে গেছে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন রাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন এবং নেদারল্যান্ডসের ভিইউ ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. তাকুমি সাইতো। 

অধ্যাপক শাহরিয়ার শোভন বলেন, গেছো শামুক প্রকৃতিতে অনেক অবহেলিত। এরা যেখানে বসবাস করে, সেই এলাকা দূষণমুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ, দূষিত পরিবেশে এই প্রাণী টিকতে পারে না। বিভিন্ন কারণে পরিবেশের জন্য উপকারী প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে। এদের সংরক্ষণ করা জরুরি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রয়োজন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, মূলত গেছো শামুকের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে কীটনাশক ব্যবহার এবং বন ধ্বংসের কারণে প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল করে গেছো শামুকের অভয়ারণ্য করে প্রাণীটিকে রক্ষার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন গবেষকরা। 

সর্বশেষ