ছাগলের মধ্যে দেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতটি বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে দেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের অনেক সুবিধা রয়েছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস এই ছাগল পালন। ছাগলের অনেক জাত আছে, যেমন: অ্যাংগোরা, বারবারি, বিটাল, যমুনাপাড়ি, সুরতি, মারওয়ারি, মালবারি, গাড্ডি, কাশ্মিরী, পশমিনা, সানেন, টুগেনবার্গ, অরপাইন, মোহসানা, ফিজি, অ্যাংলোলু। এসবের মধ্যে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল বিশ্বমানের বিশ্বসেরা ছাগল।
এসব ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, চামড়া তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। তা ছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদনক্ষমতা বেশি এবং তারা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রধানত গোশত ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। এ জন্য আমরা খুব গর্ব করে বলতে পারি ব্ল্যাক বেঙ্গল আমাদের ছাগলের জাত। এদের গড় ওজন ১৫-২০ কেজি। কখনো কখনো ৩০-৩২ কেজি পর্যন্ত হয়। দৈনিক ওজন বৃদ্ধির হার ২০-৪০ গ্রাম।
নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছাগল পালনের মাধ্যমে একজন ভূমিহীন বা প্রান্তিক খামারি বাড়তি আয় করতে পারেন। এমনও প্রমাণ আছে, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে অনেক আশাতীত সফলতা পেয়েছেন। সুতরাং খুদে মাঝারি কিংবা বড় খামারিদের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন একটি নিশ্চিত লাভজনক কার্যক্রম।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যে পাওয়া যায়। আকারে ছোট ও বড় দুই রকমের হয়। এ জন্য বয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী ছাগলের ওজনের তারতম্য দেখা যায়। এদের ঘাড় এবং পেছনের অংশ উচ্চতায় প্রায় সমান থাকে। বুক প্রশস্ত। পাগুলো ছোট ছোট। ছাগ এবং ছাগীর শিং আছে। শিং ছোট বা মাঝারি আকারের হতে পারে। লম্বায় ৫-১০ সেন্টিমিটার হয়। শিং ওপরের দিক থেকে পেছনে বাঁকানো থাকে। কানের আকার ছোট ও মাঝারি কিছুটা ওপরের দিকে থাকে। দেহের গড়ন আঁটসাঁট। গায়ের রং সাধারণত কালো। তবে ধূসর সাদা বা বাদামি রঙেরও হতে পারে। গায়ের লোম ছোট ও মসৃণ।
বছরে দুবার এবং একসঙ্গে একাধিক বাচ্চা উৎপাদন করে। তবে দুধ উৎপাদনক্ষমতা তুলনামূলক কম। স্ত্রী ছাগল ৯-১০ মাস বয়স হলেই প্রজননের যোগ্য হয় এবং ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। বলা যায়, গোশতের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল সর্বোৎকৃষ্ট। তবে দুধের জন্য যমুনাপাড়ি, বারবারি ভালো। আর পশমের জন্য গাড্ডি ও অ্যাংগোরা ভালো।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের সুবিধা
১.পারিবারিক আয় বাড়ে।
২. আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, পরিবারের মাংস ও দুধের চাহিদা মেটে।
৩. পারিবারিক আমিষের চাহিদা পূরণ হয়।
৪. চামড়া রফতানির মাধ্যমে অধিকতর আয় বাড়ে।
৫. ছাগলের দুধ খুবই পুষ্টিকর এবং এলার্জি উপসর্গ উপশমকারী।
৬. ব্ল্যাক বেঙ্গলের মাংস সুস্বাদু ও চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত।
৭. অধিক বাচ্চা উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন এবং দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী।
৮. ছাগল পালনে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়। পারিবারিক যেকোনো সদস্য দেখাশোনা করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ছাগল গেল ‘মামা বাড়িতে’, অতঃপর...
৯. দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটে বলে অল্প সময়ে সুফল পাওয়া যায়।
১০. সব ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য ছাগলের মাংস সমাদৃত।
১১. ক্ষেতের আইলের, রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশের অনাবাদি জায়গার ঘাস লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে।
১২. বাড়ির আঙিনার আশপাশের গাছগাছড়ার লতাপাতা ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
১৩. অল্প পুঁজিতে লালনপালন করা যায়।
১৪. গবাদি পশুর মতো উন্নতমানের খাদ্য আবাসন বা অন্যান্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না।