
ভারতীয় জনতা পার্টি কি আবার দিল্লির ক্ষমতা দখল করবে? বিধানসভা নির্বাচনের পর অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষার মতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)-কে হারিয়ে প্রায় ২৭ বছর পরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলো। এবারেও কংগ্রেসের আশানুরূপ ফলাফলের ইঙ্গিত দেয়নি কোনো এক্সিট পোল। খবর ডয়চে ভেলের।
দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক নম্বর ৩৬। কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি লড়েছে ৭০টি আসনে। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৬৮ আসনে। দুটি আসন তারা ছেড়েছে জেডিইউ এবং এলজেপি'কে (রামবিলাস)। অধিকাংশ সমীক্ষার ইঙ্গিত, বিজেপি জিততে পারে প্রায় ৪০ এর বেশি আসনে।
কী বলছে বুথ ফেরত সমীক্ষা?
চাণক্য স্ট্র্যাটেজিসের সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ৩৯-৪৪টি আসন। আপ জিততে পারে ২৫-২৮টি আসনে। কংগ্রেসের ঝুলিতে থাকতে পারে দুই থেকে তিনটি আসন।
ডিভি রিসার্চের বুথ-ফেরত সমীক্ষা অবশ্য কংগ্রেসকে একটি আসনও দেয়নি। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি পেতে পারে ৩৬-৪৪টি আসন এবং আম আদমি পার্টি জিততে পারে ২৬ থেকে ৩৪টি আসনে।
জেভিসির সমীক্ষার ইঙ্গিত বিজেপি পেতে পারে ৩৯-৪৫টি আসন। আম আদমি পার্টি জিততে পারে ২২ থেকে ৩১টি আসন এবং কংগ্রেস পেতে পারে শূন্য থেকে দু'টি আসন। ম্যাট্রিজের সমীক্ষা অনুযায়ী আপের ঝুলিতে থাকতে পারে ৩২-৩৭টি আসন। বিজেপি জিততে পারে ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে। কংগ্রেসের ভাগ্যে একটি আসন জয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে এই সমীক্ষাটি।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষা সবসময় সঠিক হয়না। যদি এক্ষত্রে মিলে যায় তাহলে বিজেপির জয়ের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। যে দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় আসে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে মানুষ ক্ষমা করে না। কেজরিওয়াল-সহ আপের একাধিক সদস্য, এমনকি মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ মানুষ ভাল চোখে নেয়নি।
তিনি জানিয়েছেন, কেজরিওয়াল সরকারের মূল শক্তি ছিল প্রাইমারি স্কুল, মহল্লা ক্লিনিকের মতো জনপরিষেবার প্রসার। আপ ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক ভাবে জনপরিষেবায় উন্নতি করলেও পরবর্তিকালে সেই পরিকাঠামোর অবনতি হয়। এর ফলও ইভিএমে পড়তে পারে।
বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, মোদি-সরকারের এবছরের বাজেট এবং মধ্যবিত্তদের করছাড়ের সুফল পেতে পারে বিজেপি। অন্যদিকে, কংগ্রেস এবং আপ সরাসরি লড়াইয়ের কারণে সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটি হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে, আপের ভোট কংগ্রেসে যেতে পারে।
প্রেসিুডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাদ মাহমুদ বুথ ফেরত সমীক্ষা সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক্সিট পোলের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ২০২৪-এর লোকসভা ভোট-সহ একাধিক নির্বাচনের ফলাফল তার প্রমাণ। আমাদের শনিবার (ভোট গণনার দিন) পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে দু'দফায় ক্ষমায় থাকার পর আপের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া থাকা স্বাভাবিক।
তার মতে, কংগ্রেস এই ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ভোট কাটাকাটিতে আপের ভোটেই ভাগ বসাবে কংগ্রেস। তবে কেজরিওয়ালের জেলযাত্রার ফলে আপ বেশ কিছু সহানুভূতির ভোট পেতে পারে। এ ছাড়াও এবছর দিল্লিতে ভোটদানের শতাংশ বেশ কম (৬০.৩৯%)। সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া থাকলে ভোটদানের হার বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কী হয় তা জানার জন্য আমাদের ফেব্রুয়ারি ৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
কী বলছে আপ ও বিজেপি?
দিল্লির বাঙালিপ্রধান এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কের বিজেপি নেতা ও কর্মী সলিল নন্দী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, আমি নিশ্চিত বিজেপি জিতছে। আপের তিন তারকা প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী আতিশি, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সাবেক উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া সকলেই হারতে পারেন।
আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এখনো আমরা বিশ্বাস করি, আসনসংখ্যা কমবে, কিন্তু আমরা সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব।
২০২০-র নির্বাচনে আপের দখলে ছিল ৬২টি সিট। প্রায় ৫৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজেপি কে রীতিমত পর্যুদস্ত করে তারা। কংগ্রেস খাতা খুলতে পারেনি। এই নির্বাচনের আগে আপের বিরুদ্ধে ক্রমাগত দুর্নীতির অভিযোগ শানিয়েছে বিজেপি। জেলে গেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ একাধিক আপ নেতা। ভোটবাক্সে তার কী প্রভাব পড়ে সেটাই এখন দেখার।