ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদেশি ঘোড়া উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে, কারা কিনছে এসব ঘোড়া?

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৪ মার্চ ২০২৪

বিদেশি ঘোড়া উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে, কারা কিনছে এসব ঘোড়া?

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি কোকিল গ্রামে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টির পাশাপাশি হাতছাঁনি দিয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক উৎপাদনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত।

এই খামারের নাম ‘সঞ্জু হর্স ফার্ম’। খামারের মালিক মো: শরীফুল ইসলাম সঞ্জু (৩৪) অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করা যুবক। সে স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম নূরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে সিন্দি, মারোয়ারী ও নোকড়া জাতের চোখ জুড়ানো ৭টি ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়ার মূল্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই ঘোড়া দৌড় বা রেইস খেলা খুব ভালো লাগত শরীফুল ইসলাম সঞ্জুর(৩৪)। আর এ কারণেই ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে মায়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে একটি ঘোড়া কিনে শুরু করে রেইস খেলা। এতে সে সফল হয়। দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত রেইস খেলায় অংশ নিয়ে সে অর্জন করেছে পুরস্কার ও অর্থ। তবে কিছুদিন পর হঠাৎ তার সেই প্রিয় ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে সঞ্জু মর্মাহত হলেও স্বপ্ন তাকে আরও বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস যোগায়। এরপর ২০২১ সালে ভারতের রাজস্থান ও পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আবারও সিন্দি, মারোয়ারী ও নোকড়া জাতের কয়েকটি ঘোড়া কিনে শুরু করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘সঞ্জু হর্স ফার্ম’ নামে দেশের প্রথম ঘোড়ার খামার। বর্তমানে ওই খামারে ২ জন শ্রমিক নিয়মিত এই ঘোড়াগুলি পরির্চযা করছে। ফলে প্রতিদিনই এলাকাবাসি ছাড়াও দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লোকজন আসছে এই ঘোড়ার খামার দেখতে এবং কিনতে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আনসার একাডেমিতে এই খামারে ঘোড়া বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও শখের বশে সমাজের উচ্চবিত্তরাও কিনে নিচ্ছে এসব ঘোড়া। এতে সে বেশ লাভবান বলেও জানান সঞ্জু।

তিনি জানান, ঘোড়া পালনের কারণে প্রথম দিকে এলাকার মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, টিপ্পুনি কাটত। কিন্তু এখন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এই খামার দেখতে। তা দেখে গ্রামের মানুষরা অবাক হয়, মুগ্ধও হয়।

ঘোড়া প্রভুভক্ত প্রাণী উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ঘোড়াকে আপনি যা শেখাবেন, তাই সে শিখবে। ফলে এই ঘোড়া নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু দেশে ঘোড়ার চাহিদা থাকলেও নেই খামার। ফলে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ঘোড়া আমদানি করতে হয়। আর এ কারণেই আমি এই খামারেই ঘোড়া উৎপাদন করতে চাই। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করাও সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগীতা অপরিহার্য।

এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় ঘোড়া দৌঁড় ছিল গ্রাম বাংলার ঐহিত্যের খেলা। কিন্তু বর্তমানে রেইস করার জন্য ভালো ঘোড়া দেশে পাওয়া যায় না। অথচ জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যে রেসকোর্স মাঠে ৭ মার্চের ভাষন দিয়েছিলেন, সেই মাঠটি ছিল ঘোড়া দৌড় বা রেইস খেলার জন্য। তবে ১৯৪৯ সালে এই মাঠে ঘোড়া দৌড় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই কদর কমতে শুরু করে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগীতার। এতে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়ায় মাদকসক্ত হয়ে পড়ছে গ্রামের তরুনরাও। ফলে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সরকার চাইলে আবারও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশে ঘোড়া দৌড় আয়োজন করা সম্ভব। এছাড়া ঘোড়া দৌড় আন্তর্জাতিক মানের একটি খেলা। সারাবিশ্বে এই খেলার কদর রয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ঘোড়ার রেইস বা রাউডিং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি বলেও প্রমাণিত।

খামারের শ্রমিক রোকনুজ্জামান বলেন, ছোলা বুট, ধানের কুড়া, খড় ও সবুজ ঘাস ঘোড়ার প্রধান খাবার। ফলে সময় মেনে খাবার দিলে ঘোড়া পরিচর্যায় কোন সমস্যা হয় না। এক্ষেত্রে ঘোড়ার লাথি এবং কামড় থেকে সাবধান থেকেই এসব করতে হয়। তবে আমাদের ঘোড়াগুলো পোষা হওয়ায় এ ধরনের কোন সমস্যা আমাদের হয় না।

এ সময় কথা হয় খামার দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা মো: সাদেক আলীর সাথে। তিনি বলেন, এই খামারের ঘোড়াগুলি সিনেমার ঘোড়ার চেয়েও সুন্দর। আগে এসব ঘোড়া সিনেমায় দেখলেও এখন এসব ঘোড়া আমাদের এলাকাতেই লালন পালন হচ্ছে। এ কারণে দেশের অনেক স্থান থেকে মানুষ এই খামার দেখতে আসে। তবে এই খামারে আসা-যাওয়ার সড়কটির বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে এই সড়কটিতে চলাচলে অনেক কষ্ট। ফলে সড়কটির সংস্কার এখন এলাকাবাসির দাবিতে পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রাহেলা পারভীন রুমা বলেন, ওই ঘোড়ার খামারের সাথে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সেবা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাণী সম্পদের নিবন্ধনে ঘোড়ার বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় বন ও পরিবেশ বিভাগ নিবন্ধন বিষয়টি দেখবে বলে মনে হয়।

যেভাবে যেতে হবে খামারে :

দেশের এই ঘোড়ার খামারটি দেখতে হলে আসতে হবে ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার ২ নং কুষ্টিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কোকিল গ্রামে। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহ শহর থেকে টাউন হল হয়ে মুক্তাগাছা সড়কের বেগুনবাড়ি মোড়ে পৌঁছতে হবে। এরপর রিক্সা বা অটো যোগে বাইগুনবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনের পাশ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে ছবির মত আঁকা গ্রাম কোকিল। এই গ্রামেই মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মাষ্টারের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সঞ্জু হর্স ফার্ম।