দেশখ্যাত দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে এখন মৌ মৌ গন্ধ। আর লিচু মুকুল থেকে সুস্বাদু, মিষ্টি এ মধু মৌমাছির মাধ্যমে আহরণ করছেন শত শত মৌ-খামারিরা। এতে বাগানিরা ও মৌচাষি উভয় লাভবান হচ্ছেন। দিনাজপুরে এবার প্রায় ১১শ মৌখামার লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছে। এবার দিনাজপুরের লিচুর মুকুল থেকে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মৌ-খামারিরা। ব্যাপক ফুল থাকায় মধু উৎপাদন রেকর্ড ছুঁতে পারে। উৎপাদিত মধু দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
দিনাজপুরে বর্তমানে প্রায় ১১০০ মৌখামার লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছে। দিনাজপুর সদরের মাসিমপুর, কিষাণ বাজার, শেখপুরা, উলিপুর, পাঁচবাড়ী, বিরলের মাধবাটি, ঝুকুরঝাড়ি, কাশিডাঙ্গা, খানসামার সনকা, কাঁচিনিয়া, বীরগঞ্জের গোপালগঞ্জ, চিরিরবন্দরের মাদারগঞ্জ, পার্বতীপুরের আমবাড়ি, ফুলবাড়ি উপজেলাসহ লিচু বাগানগুলোতে চলছে মধু উৎপাদনের উৎসব। এবছর গাছে প্রচুর লিচু মুকুল থাকায় দিনাজপুরে খামার স্থাপনের সংখ্যা বেড়েছে। সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খামারিরা প্রায় ৯ হাজার মৌবক্স স্থাপন করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ১৫-২০ কেজি লিচু মধু উৎপাদন সম্ভব। সে হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন মধু দিনাজপুরে উৎপাদিত হবে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। লিচু মধু পাইকারি বাজারে প্রতিমণ সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই লিচু মধুর বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সুঘ্রাণ, আকর্ষণীয় রঙ আর অতুলনীয় স্বাদ বিদ্যমান থাকায় দিনাজপুরের লিচু মধুর আলাদা কদর দেশজুড়ে। বর্তমানে দেশের বাইরেও কদর বাড়ছে লিচু মধুর। এসব তথ্য জানিয়ে দিনাজপুরের লিচু মধুর জিআই দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সদস্য ও সফল মৌচাষি মোসাদ্দেক হোসেন।
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউপির মাশিমপুর এলাকার লিচুবাগানে ১০০ মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রতি সপ্তাহে বাক্স থেকে মধু আহরন করতে হয়। মাস্টার্স পাশ করে চাকুরির পিছনে না ছুটে মৌ-খামার গড়ে মধু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন এবং অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক)’র উপ-মহব্যবস্থাপক মোঃ জাহেদুল ইসলাম জানান, লিচু বাগানে মৌচাষ করে মৌচাষিরা যেমন মধু চাষ করে লাভবান হয়, অপরদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচুর ফলনও ২৫ ভাগ বেশি হয়। এতে বাগানিরা ও মৌচাষি উভয় লাভবান হবেন। এতে বেকারত্ব যেমন দূর হয়, তেমনি লিচুর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। লিচুবাগান আছে ৫৪১৮টি।