ঢাকা   শনিবার
১৫ মার্চ ২০২৫
৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৫ রমজান ১৪৪৬

রোহিঙ্গাদের প্রশংসায় ভাসছেন গুতেরেস-ড. ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৫ মার্চ ২০২৫

রোহিঙ্গাদের প্রশংসায় ভাসছেন গুতেরেস-ড. ইউনূস

নিজ দেশ মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত জীবনের দীর্ঘ ৮ বছর অতিক্রম করছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। দ্বিতীয়বারের মতো তাদের দুঃখ গাঁথা শুনতে এবং চলমান জীবন পরিদর্শনে এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২০১৭ সালে রাখাইনে ঘটে যাওয়া এবং আশ্রিত জীবনে চলতে থাকা দুঃখ গাঁথায় ভারাক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মন। কিন্তু সেই বেদনার্ত মন আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ইফতার আয়োজনে। 

আশ্রয় ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুতদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব হাসিমুখে ইফতারে যোগ দিয়ে যেন প্রমাণ করেছেন, রোহিঙ্গারাও বিশ্ব অধিবাসী। এমনটিই ভাবছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. যোবায়ের বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে এসেছেন। তিনি ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর শিডিউল মতো নানা স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ও কমিউনিটির সঙ্গে জীবনমান নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সেখানে সাম্প্রতিক রোহিঙ্গাদের খাবারের বিল কমানোসহ টেকসই প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছি। তিনিও আমাদের শিক্ষার্থী ও কমিউনিটি নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন।

গতকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দর পৌঁছান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। কক্সবাজার বিমানবন্দরে জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পুলিশ সুপার সাইফুদ্দীন শাহীনসহ অন্যরা।

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। 

ইফতার পার্টিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমসহ পদস্থরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে কক্সবাজার পৌঁছে জেলা শহরে নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি সাইট পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টাকে সেখানকার কাজের অগ্রগতি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।

বিমানবন্দরটি চালু হলে প্রতিদিন ৪০-৫০টি এয়ারক্রাফট এ বিমানবন্দর থেকে ওঠা-নামা করবে। পরিদর্শনকালে বেবিচক কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেখানকার কাজের অগ্রগতি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

বিমান বন্দর পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে যান এবং সেখানকার অগ্রগতি এবং প্রকল্পের ঘর কাদেরকে দেওয়া হয়েছে, কী প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তালিকা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং দায়িত্ব বণ্টন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোর দেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যাদেরকে পুনর্বাসন করার কথা তারাই বাড়ি-ঘরগুলোতে উঠতে পারছে কি না, অন্য কেউ এসে নিয়ম না মেনে অসাধু উপায়ে উঠে পড়ছে কি না এগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। ভবনতো টাকা দিলেই নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু যে লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছি সেটা পূরণ না হলেতো এসবের কোনো অর্থ নেই।

প্রকল্পের একটি জমি ২০১৭ সাল থেকে বেক্সিমকো গ্রুপ দখলে রেখেছে বলেও সংশ্লিষ্টরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এটি নিয়ে আদালতের রায় হওয়ার কথা রয়েছে।

এরপর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন অসীম দুর্নীতি চলেছে। যাদের সুবিধা পাওয়ার কথা তাদের না দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে দেওয়া হয়েছে, টাকা-পয়সারও লেনদেন হয়েছে। কিন্তু যাদের ন্যায্য পাওনা ছিল তারা পায়নি। কিন্তু এ ভুল আর করা যাবে না। প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি হতে না পারে। তত্ত্বাবধান ঠিকমতো হতে হবে, কার কী দায়িত্ব পরিষ্কার হতে হবে।

বিমানবন্দর ও খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার জেলার পর্যটন ও উন্নয়ন সম্ভাবনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিকেলে বিয়াম অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ সভার শুরুতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আঁর হতা হইবাল্লাই ন-আইয়ি, অনারাত্তুন জাইনত আইসসিদে।’

কক্সবাজারের প্রোগ্রাম শেষ করে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘মেগা’ ইফতারে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে অংশ নেওয়া লাখো রোহিঙ্গার উদ্দেশে কথা বলেন ড. ইউনূস ও অ্যান্টোনিও গুতেরেস। ইফতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব একসঙ্গে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন বলে জানান কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।