ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১৭ মার্চ ২০২৪

উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। উপকূলীয় এলাকায় কম খরচে চাষ উপযোগী বারি-১৮ নামের এ সরিষার ফলন হবে দ্বিগুণ। নতুন এ জাত ছড়িয়ে দেয়া গেলে কমতে পারে ভোজ্যতেলের আমদানি।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে দেশে দিন দিন বাড়ছে ভোজ্য তেলের চাহিদা। ২০২১–২২ অর্থ বছরে দেশে ২১ দশমিক তিন-ছয় লাখ টন তেল আমদানি হয়। যার মধ্যে ১৩ দশমিক ৫৫ টন পাম ও ৭ দশমিক ৮ লাখ টন সয়াবিন তেল। যার জন্য ব্যয় হয় ১৮৪ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার বা প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন। যার মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন। যা মোট চাহিদার মাত্র ১২ শতাংশ। বিশাল এ ব্যবধান কমাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

এরই মধ্যে বারি-১৮ নামে নতুন সরিষা বীজ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। বরিশাল বিভাগের কয়েকটি জেলার অন্তত ৪০ হেক্টর জমিতে নতুন এ জাত এবার স্বল্প পরিসরে পরীক্ষমূলকভাবে আবাদ করা হয়। যেখান থেকে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মণ সরিষা দানা পাওয়া যায়। অন্যজাতের সরিষা যা হয় ৪ মণের মতো। আমন কাটার পর জমি চাষ ছাড়াই রোপণ করা যায় বারি-১৮।

৯৫ থেকে ১০০ দিন জীবনকালের এ সরিষা বীজে তেলের পরিমাণ ৪০-৪২ ভাগ। যাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর 'ইরোসিক এসিড' থাকে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অন্য সরিষার ক্ষেত্রে যা থাকে ২০ ভাগের বেশি। রয়েছে ওমেগা থ্রি, সিক্স ও নাইন। এছাড়া বারি-১৮ সরিষার লবণাক্ত সহনশীলতার মাত্রা প্রতি মিটারে ৬ থেকে ৮ ডেসিমেল। ফলে উপকূলীয় এলাকাতেও ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন ড. মো. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, 'প্রায় ৫ বছর আমরা এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। এটার ফলন আগের জাতগুলোর চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি।'

মাথা পিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হিসেবে ২০৩০ সালে ভোজ্য তেলের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ২৮ লাখ টন। এমন অবস্থায় 'তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের' মাধ্যমে ২০২৫ সালের জুনের চাহিদার ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল স্থানীয় ভাবে উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুণ্ডু বলেন, 'বারি সরিষা ১৮ তে আমরা ৪০-৪৫ শতাংশ তেল উৎপাদন করতে পারি। অন্যান্য জাতের তুলনায় এ জাতের ফলনও বেশি। এ অঞ্চলে সরিষা চাষ বৃদ্ধি করতে বর্তমান সরকার জোর দিয়েছে।'

অল্প বৃষ্টি, পানিসহ প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারা বারি-১৮ জাতের সরিষা রোপণ করা যায় ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকেও। কম খরচ ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় ইতোমধ্যে যা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে।

চাষিরা বলেন, 'বারি-১৮ সরিষা খুবই ভালো সরিষা। এবার ফলন দেখে খুব আনন্দ লাগতেছে। অনেক কৃষক আইসা দেখতেছে। তারাও এটা চাষ করবে। সবাই খুশি।'

উন্নত মানের বীজ উৎপাদন ও এর সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা ৪০ শতাংশ কমানোর সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর বদিউজ্জামান।

তিনি বলেন, 'এ জাতটা যদি আমরা কৃষক পর্যায়ে দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারি তাহলে আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমবে। বরং আমরা রপ্তানি করতে পারবো।'

দেশে আবাদ করা তেলবীজের প্রায় ৬০ শতাংশই সরিষা। বর্তমানে দেশে ৫ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। যেখান থেকে পাওয়া যায় ২ লাখ টন তেল।