হাঁসের মাংস কেবল শীতকালের জন্য-এমন একটি ধারনা বাংলাদেশের মানুষের অধিকাংশ মানুষের। ফলে দেশে সাধারণত শীতকালেই হাঁসের মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কারণ, এই সময় হাঁসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় হাঁসের মাংস খেতে সুস্বাদু হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই এই প্রচলিত ধারার অবসান হতে যাচ্ছে। হাঁস কেবল শীতকালে খাওয়া উপযোগী এমন ধারনাও পাল্টে দিবে। বাংলাদেশে সব ঋতুতেই যাতে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু হাঁসের মাংস সহজলভ্য ও জনপ্রিয় করতে সূদূর ফ্রান্স থেকে দেশে এসেছে পেকিন স্টার -১৩ জাতের হাঁস। জাতটি ইতিমধ্যে দেশের খামারিগণ পালন শুরু করেছেন এবং অন্যান্য খামারিদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে।
তাই পেকিন স্টার -১৩ জাতের হাঁস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানাতে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে পেকিন স্টার-১৩ হাঁস উৎপাদন ও বাজারজাতকারী ব্রিডিং কোম্পানি GRIMAUD Freres এর রপ্তানি পরিচালক মি. এরিক (Mr. Eric MEUNIER, Export Director) এবং রপ্তানি প্রকৌশলী মি. জীন-ক্রিস্টফ পয়রার (Mr. Jean – Christophe POIRIER, Export Engineer)।
তিনি বলেন, এনিমেল জেনেটিক সিলেকশন, বায়ো প্রোডাক্টস এবং ইনোভেটিভ প্রোটিন উৎপানের ক্ষেত্রে ফ্রান্সভিত্তিক GROUPE GRIMAUD বিশ্বের একটি নেতৃত্বস্থানীয় কোম্পানি। কোম্পানিটি ১৯৬৬ সন থেকে হাঁস ব্রিডিং শুরু করে এবং বিশ্বের ১০০টির অধিক দেশে তারা পেকিন জাতের হাঁস সরবরাহ করে আসছে। GRIMAUD FRERES মূলত GROUPE GRIMAUD এরই একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির মূল স্লোগান হচ্ছে Caring for life।
দেশের বাজারে পেকিন স্টার -১৩ ব্রিড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পোল্ট্রি কনসালটেন্ট এন্ড ডেভেপমেন্ট সার্ভিসেস লি:-এর প্রধান নির্বাহী কৃষিবিদ রফিকুল হক বলেন, GRIMAUD FRERES, France থেকে প্লানেট হ্যাচারি লিমিটেড ২০২২ সনের ২৯ জুলাই দেশে প্রথম Pekin STAR 13 জাতের প্যারেন্ট স্টক আমদানি করে। আমদানিকৃত প্যারেন্ট স্টক থেকে উৎপাদিত ১ দিন বয়সী উন্নতমানের পেকিন স্টার ১৩ জাতের ডুয়াল পারপাজ (মাংস এবং ডিম উভয় উৎপাদনকারী) কমার্শিয়াল চিকস্ এর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও গত বছরের ২৪ নভেম্বর চাঁদ এগ্রো লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি উল্লেখিত জাতের ১ দিন বয়সী প্যারেন্ট স্টক আমদানি করেছে। আমরা আশা করছি, সামনে এ ধারা আরো বেশি অব্যাহত থাকবে এবং ব্রয়লার মুরগির মতো হাঁসের মাংসও বছরব্যাপী মানুষের পাতে জায়গা করে নিবে।
রফিকুল হক বলেন, হাঁস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের গৃহিনীদের বড় একটি সমস্যা হলো হাঁসের চামড়ার সাথে লেগে থাকা ছোট ছোট পালক বা পিন ফেদার। অনেকে এই ভয়ে হাঁস রান্না করতে চান না। কিন্তু পেকিন স্টার-১৩ জাতের হাঁসের চামড়াতে উল্লেখিত পিন ফেদার থাকবে না; ফলে রান্নাকে করবে আরো সহজ ও ঝামেলাহীন।
পেকিন স্টার-১৩ জাতের হাঁসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন -এটি দ্রুত বর্শনশীল হওয়ায় এই জাতের মেল ও ফিমেল উভয় হাঁসই মাংসের জন্য পালন উপযোগী। ফিমেল হাঁস অধিক ডিম উৎপাদনে সক্ষম। সাদা পালকের জন্য এর দেহবয়ব আকর্ষণীয় । চওড়া দেহ, উজ্জ্বল হলুদাভ পা ও ঠোঁট বিশিষ্ট। উন্নত এফ সি আর সম্পন্ন। শক্ত ফাইবারযুক্ত সুস্বাদু মাংস। জলে বা ডাঙ্গায় উভয় ক্ষেত্রে পালন করা যায়। সকল আবহাওয়ায় প্রতিপালনযোগ্য। খেলনা ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরিতে সাদা পালকের আর্থিক মূল্য থাকায় এই জাতের হাঁসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি ও অধিক ডিম উৎপাদনের জন্য পেকিন স্টার ১৩ জাতের হাঁস পালন খুবই লাভজনক।