ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৩ মার্চ ২০২৫
২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

শীত মৌসুমে গবাদিপশু খামারিদের লক্ষণীয় ও করণীয়!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

শীত মৌসুমে গবাদিপশু খামারিদের লক্ষণীয় ও করণীয়!

ঋতু পরিক্রমায় শীতের আগমন ঘটে। মানুষের ওপর যেমন শীতের প্রভাব পরে তেমনি গবাদিপশুর ওপরেও শীতের প্রভাব পরে। শীতের প্রভাব থেকে গবাদিপশুদের রক্ষা করতে খামারিরা প্রচণ্ড হিমশিম খায়। অনেক সময় শীতের প্রভাব থেকে গবাদিপশুদের রক্ষা করতে না পারায় খামারিদের লোকসানের কবলে পড়তে হয়। আর সে কারণেই শীতের সময় খামার পরিচালনার ক্ষেত্রে খামারিদের বিশেষ নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। এই শীতে গবাদিপশুর যত্ন নিন, তাহলে সুস্থ থাকবে আপনার খামারের পশুগুলো।

শীতের সময় আবহাওয়াজনিত কারণে গবাদিপশুদের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

শীতে গবাদিপশুর সাধারণত যেসব রোগগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো- দুগ্ধবর্তি গাভীর দুধ কমে যাওয়া, গ্রোথ কমে যাওয়া, গলাফুলা, ক্ষুরারোগ, বাদলা, তড়কা, ফ্যসিওলিওসিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। এসব রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, শীতের সময় খামারে গবাদিপশুর শরীরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখতে সরবরাহকৃত খাদ্য হতে প্রাপ্ত এনার্জি বেশি ব্যয় করে থাকে। শীতের সময় ঠাণ্ডার কারণে বিভিন্ন বয়সের প্রানীর পীড়ন বেশি হয়। 

শীতের সময় খামারীদের করণীয়-
১. আপনার খামারের চারপাশে যদি দেয়াল না থাকে বা ফাঁকা থাকে তাহলে মোটা কাপর, চটের বস্থা, পলিথিন বা ত্রিফল দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে বাহিরের ঠাণ্ডা আবহাওয়া বা বাতাস খামারের ভিতরে না আসতে পারে।

২. গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।  ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য মেঝে/লিটার ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। শীতের সময় লিটারের উচ্চতা বাড়িয়ে ৭-৮ ইঞ্চি পুর করে দিতে হবে। খামারের আশপাশে ডালপালাযুক্ত গাছ থাকলে তা কেটে বা ছেঁটে ফেলতে হবে। যাতে খামারে সূর্যের আলো আসে। সর্বোপরি শেডে সার্বিক তাপমাত্রা রক্ষা করতে হবে।

৩. শীতকালে দিন ছোট থাকায় সূর্যের স্বাভাবিক আলো প্রাপ্তির সময় কম হয়। বিশেষ করে ডিম পাড়া মুরগী, হাস, কোয়েল, কবুতার  ক্ষেত্রে দিনের আলো হিসাব করে রাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. শীতকালে সঠিক মান অনুযায়ী সুষম খাদ্যের ফর্মুলা তৈরি করে সরবরাহ করতে হবে। শীতকালে প্রানীর দেহে অধিক শক্তি যোগানোর জন্য খাদ্য উপাদানে পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যে এনার্জির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

৫. খামারের বিভিন্ন বয়সের ও ভিন্ন ভিন্ন জাতের প্রানীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো কৌশল হলো “অল ইন আউট” বা “একত্র প্রবেশ একত্রে বাহির” পদ্ধতি অনুসরণ করা।

৬. খামারের প্রতিটি প্রানীর জন্য পরিমাণমতো জায়গা রাখতে হবে এবং কম জায়গায় যেন বেশি প্রানী না থাকে সেদিকে খামারীদের লক্ষ রাখতে হবে।

৭. খামারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনোক্রমেই পুকুর, পাতকুয়ার পানি পশুকে খাওয়ানো যাবে না। খাদ্য, পানির পাত্র ও অন্যান্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এসব উৎসের পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না। পানির পাত্র দিনে দুইবার পরিষ্কার করতে হবে।

৮. খামারে কোন প্রানীর রোগব্যাধি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে সেগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। প্রকৃত রোগ শনাক্ত করে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত প্রানীকে যেখানে, সেখানে না ফেলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

৯. খামারের প্রতিদিনের কাজের রেকর্ড রাখতে হবে। খাদ্য প্রদান, তাপমাত্রা, ভ্যাকসিনেশন ও রোগের প্রার্দুভাবের রেকর্ডসহ কখন কোন ঔষধ/টিকা প্রদান করা হলো তার রেকর্ড রাখতে হবে।

১০. প্রতিদিন প্রানীর শেড/ঘরে আলগা ময়লা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করলে রোগ জীবাণু সহজে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতিটি খামারের সম্মুখে জীবাণুনাশক পাত্র রাখতে হবে এবং ঘরে প্রবেশের পূর্বে পরিচর্যাকারীকে তা ব্যবহার করতে হবে।

১১. খামারে যেন কোনো রকম পাখি, ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খামারীকে খেয়াল রাখতে হবে।

১২. গরু, ছাগল, হাঁস/মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা/জেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।