ঢাকা   শুক্রবার
৩১ জানুয়ারি ২০২৫
১৮ মাঘ ১৪৩১, ০১ শা'বান ১৪৪৬

স্ক্রিন ব্যবহার কি মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, গবেষণা উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

agri24.tv

প্রকাশিত: ১০:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১০:১৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

স্ক্রিন ব্যবহার কি মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, গবেষণা উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

ডিজিটাল যুগে এসে আমাদের প্রতিদিনের অনেকটা সময় যায় ইন্টারনেট দুনিয়াতে। সব বয়সের মানুষ স্ক্রিন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকেই ভাবেন যে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। মনোযোগ নষ্ট করার পাশাপাশি আইকিউ কমিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে করা হয়েছে একাধিক গবেষণাও। সম্প্রতি করা এক গবেষকরা বলছেন, এটি আসলে সঠিক নয়।  

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মানব আচরণ ও প্রযুক্তি বিষয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রিজবিলস্কি বলেন, প্রযুক্তি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে যার বেশিরভাগই ভয় দেখানোর মতো তথ্য দেয়। অথচ, বড় গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব নেই। 

প্রযুক্তি যেভাবে আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে: সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণা, বই, পডকাস্ট ও নিবন্ধে বলা হচ্ছে যে, ডিজিটাল জীবন আমাদের মস্তিষ্কের গঠন বদলে দিচ্ছে, মনোযোগ কমিয়ে দিচ্ছে এবং আইকিউ হ্রাস করছে। এমনকি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০২৪ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘ব্রেন রট’—যার অর্থ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে মানুষের মানসিক অবক্ষয়।  তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অধ্যাপক প্রিজবিলস্কি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা শুনে আসছি, স্ক্রিন, প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবে, এই গবেষণাগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমানের, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি।

২০২৩ সালে প্রিজবিলস্কি ও তার সহকর্মীরা ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী ১২ হাজার শিশুর উপর গবেষণা চালান এবং দেখেন, স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়নি। স্ক্রিন টাইম তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় কোনো ক্ষতি করেনি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আসলে সুখী জীবনযাপন করেন। যেসব শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এবং যাদের বাড়িতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট আছে, তাদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মান ভালো।  এ কারণেই তারা প্রাণবন্ত থাকে এবং আত্মবিশ্বাসী। 

তিনি বলেন, যেসব গবেষণায় প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব দেখানো হয়, সেগুলোর নমুনার সংখ্যা কম, নিয়ন্ত্রণ দল নেই এবং সঠিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নেই। 

আইকিউ কি সত্যিই কমছে: কিছু গবেষণা দাবি করেছে যে, প্রযুক্তির কারণে মানুষের আইকিউ কমছে। তবে ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপেরিয়রের গবেষক ফ্র্যাঙ্ক রামুস বলছেন, আইকিউ কমার ব্যাপারটি এখনো নিশ্চিত নয়। বিংশ শতাব্দীতে মানুষের আইকিউ বেড়েছিল, কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এটি স্থিতিশীল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যেমন ৩ মিটার লম্বা মানুষ আশা করতে পারি না, তেমনই মস্তিষ্কের বৃদ্ধিরও একটি সীমা রয়েছে।

অন্যদিকে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বিষয়টি নিয়েও একাধিক গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটির অধ্যাপক টনি চেমেরো বলেন, আমরা যখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক নতুনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। এটি মস্তিষ্ক নষ্ট করছে না, বরং আমাদের চিন্তার ধরণ বদলে দিচ্ছে। ২৫০০ বছর আগেও প্লেটো লিখেছিলেন, লেখার অভ্যাস মানুষের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করবে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষ মানিয়ে নিতে পারে। তাই আমাদের  স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে কিংবা নষ্ট হচ্ছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছুর সঙ্গে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে। তবে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানতে হবে নয়তো বিপদ হতে পারে। 

প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম: অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রিজবিলস্কি বলেন প্রযুক্তি আমাদের জীবন সহজ করেছে। যদিও অনেকেই বলেন এটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। আসলে সব কিছুর ভালো-খারাপ দুইটা দিক থাকে। আপনাকে জানতে হবে কীভাবে সঠিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। আমার সন্তানদের আমি স্ক্রিন থেকে দূরে রাখি না। বরং, আমি তাদের শেখাই কীভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যা করবেন:  

প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখা জরুরি।
দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে বিরতি নেয়া উচিত।
একসঙ্গে একাধিক কাজ না করে একটি কাজে মনোযোগ দেওয়া ভালো।
ফোন ও প্রযুক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে না, বরং আমরা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করব। 

সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, প্রযুক্তি আমাদের মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি করছে না। বরং, এটি আমাদের চিন্তাভাবনার ধরণ বদলে দিচ্ছে। তাই ভয় না পেয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।