টাইফয়েডের জীবাণুতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এগুলো মানুষের শরীরে অন্য ব্যাকটেরিয়ার জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে শঙ্কা গবেষকদের। অনুসন্ধানে পাওয়া বেশিরভাগ সালমোনেলা জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক রোধী। চট্টগ্রামের হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ আর বাসা থেকে নেওয়া দেড়শো পানির নমুনা নিয়ে এই গবেষণা হয়েছে।
খাবার পানিতে জীবাণু শনাক্তে ২০২২ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের দেড়শোটি উৎস থেকে নমুনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮টিতে টাইফয়েডের সালমোনেলা টাইপি জীবাণু পাওয়া যায়। এসব জীবাণুর ৮৭ ভাগই বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক রোধী।
গবেষকরা জানান, বেশিরভাগ নমুনায় ৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন শনাক্ত করেছেন তারা। এগুলো মানুষের শরীরে ঢুকলে, অন্য ব্যাকটেরিয়ারও জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব সালমোনেলা টাইপিগুলো সবই মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্ব দেওয়ার মতো বিষয়। আরেকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব জীবাণুর ভেতরে মাল্টিপল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন শনাক্ত হয়েছে। যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ফিজিওলজিক্যাল সিস্টেমে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিন প্রবেশ করতে পারে। এতে আমাদের জেনেটিক্যালি পরিবর্তন আসতে পারে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করা ছাড়া এসব জীবাণু দূর করা সম্ভব নয়। এছাড়া, নতুন ওষুধ নিয়েও কাজ করছেন গবেষকরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘বোতলজাত পানি হলেও অনেক সময় এসব জীবাণু পাওয়া যায়। সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে এক ঘণ্টা ধরে পানি ফুটানো। অথবা রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করতে হবে।’
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে আমরা দুইটি কাজ করেছি। এখন আমরা এই সমস্যা থেকে কিভাবে বের হবো, সেই বিষয়ে কাজ করছি। এক্ষেত্রে এমন ঔষধ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে, যেটির রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হয়। সেটা হতে পারে প্রোবায়োটিক। কয়েক বছর ধরেই আমরা সেটা চেষ্টা করছি।’