ঢাকা   মঙ্গলবার
২১ জানুয়ারি ২০২৫
৭ মাঘ ১৪৩১, ২০ রজব ১৪৪৬

আবাসস্থল হারিয়ে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ১৩ মার্চ ২০২৪

আবাসস্থল হারিয়ে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী

আবাসস্থল হারিয়ে ক্রমেই হুমকির মুখে দেশের বন্যপ্রাণী। আবার বন উজাড়ে কমছে খাদ্যের জোগান। এমন নানা সংকটে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী মিলে গত ১০০ বছরে দেশ থেকে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী চিরতরে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে আরো ৯০ প্রজাতির প্রাণী। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। তবে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী নিজেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য ও বাসস্থান সংকট, বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। আইইউসিএনের ২০০০ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১৩। আর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্তর তথ্য দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ এ ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ১৬ প্রজাতির প্রাণী।

আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী দেশে মোট ৫৬৬ প্রজাতির পাখি ছিল একসময়। তবে ১০০ বছরের মধ্যে ১৯ প্রজাতির পাখি চিরতরে হারিয়ে গেছে। এ সময়ে বিলুপ্ত হয়েছে ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও এক প্রজাতির সরীসৃপ। বিলুপ্ত হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ডোরাকাটা হায়েনা, ধূসর নেকড়ে, নীলগাই, বান্টিং বা বনগরু, বনমহিষ, সুমাত্রা গন্ডার, জাভা গন্ডার, ভারতীয় গন্ডার, বাদা বা জলার হরিণ, কৃষ্ণষাঁড় ও মন্থর ভালুক। পাখির মধ্যে রয়েছে লালমুখ দাগিডানা, সারস, ধূসর মেটে তিতির, বাদা তিতির, বাদি হাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, সাদাফোঁটা গগন রেড, রাজশকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লালমাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া ও সবুজ ময়ূর। আর সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর মধ্যে মিঠাপানির কুমির বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

এদিকে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের পরিবেশ আজ সংকটাপন্ন। বুনোহাতির দল থেকে শুরু করে পাখি, এমনকি সাগরের তলদেশের প্রাণী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ১০০ বছরে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী।’

পরিবেশনমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ও বিপদাপন্ন হওয়ার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য, যা মানুষের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণী ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এখন কেবল দরকারই নয়, বরং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আমরা আর কোনো বন্যপ্রাণী হারাতে চাই না।’

আইইউসিএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৩৯০টি বন্যপ্রাণী কোনো না কোনোভাবে বিপন্ন। এসব প্রাণীর তালিকাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মহাবিপন্ন প্রাণী ৫৬টি, বিপন্ন ১৮১টি ও ঝুঁকিতে আছে ১৫৩টি প্রজাতি। আর ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে ৯০ প্রজাতির প্রাণী। এ প্রজাতিগুলোকে আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার পেছনে মানবসৃষ্ট কারণ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। যেমন বন্যপ্রাণীর বাসস্থান নষ্ট করা হচ্ছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, নগরায়ন, জলাশয় ভরাটের কারণে এসব প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া হাওরে দেখা যায় অতিরিক্ত চায়না জালের ব্যবহার। এতে পাখি কমে যাচ্ছে। এসব কারণে আবার প্রজননস্থানও নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন ৫৩টি এলাকাকে বন্যপ্রাণী প্রটেক্টেড এরিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বিবেচনা করা হয়েছে পাঁচটি সামুদ্রিক প্রটেক্টেড এরিয়া। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এগুলো ধরে রাখা গেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব হবে।’

সর্বশেষ