এখন যেসব জেলে গভীর সাগরে জাল ফেলবে তাদের জালেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া অস্বাভাবিক বিষয় নয় বলে ধারণা পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলামের। কুয়াকাটা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ১৩০ মণ ইলিশ। সূর্য মাঝি নামের ওই জেলে শনিবার সকালে এসব মাছ বিক্রির জন্য আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার রাতে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সাগরের একটি পয়েন্টে এসব মাছ ধরা পড়ে বলে জানান সূর্য মাঝি।
জেলে সূর্য মাঝি জানান, গত বুধবার ১৭জন জেলেসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আল্লাহর দয়া-১ নামের একটি ট্রলার নিয়ে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে আলীপুর থেকে বঙ্গোপসাগরে যাত্রা করেন তিনি। পরে একবার জাল টান দেয়ার পরই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় পুরো মাছ ট্রলারে তুলতে না পারে অর্ধেক জাল সাগরে ফেলেই চলে আসেন তারা। এসব ইলিশের বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলে জানান তিনি।
হঠাৎ করে সাগরে কেন এত ইলিশ ধরা পড়ছে, জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি ভাল খবর। সকালেই আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে ধারণা করা হচ্ছে, গভীর সাগরের কয়েকটি পয়েন্টে ইলিশের অবাধ বিচরণ শুরু হয়েছে। কারণ মাঝখানে বেশ কিছুদিন গভীর বা মাঝ সাগরে ইলিশ ধরা না পড়ায় কুয়াকাটা-সংলগ্ন উপকূলের জেলেরা সাধারণত সাগরতীরবর্তী এলাকাতেই বেশি জাল ফেলেছে।
‘গভীর সাগরে মাছ শিকার থেকে বিরত ছিল। যে কারণে মাঝ সাগর ছিল ফাঁকা। আবার গত দুই মাস ধরে সাগরে অস্বাভাবিক পরিমাণ জেলিফিশ ধরা পড়াতেও জেলেরা গভীর সাগরে না গিয়ে উপকূলবর্তী এলাকায় মাছ শিকারে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক এই সময়ে ইলিশ অবাধ বিচরণ শুরু করায় এখন গভীর সাগরে, বিশেষ করে ২০ থেকে ৩০ ফুট লম্বা জাল ফেলতে পারলেই ইলিশের দেখা মিলছে।’
শনিবার সকালে কুয়াকাটার মহিপুরে সূর্য মাঝির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার জালও ছিল ভাসান জাল।
‘তাছাড়া সাগরে পানির অবস্থানও বদল হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর ঢেউ দেখা গেছে। ইলিশ পড়ার এটিও একটি কারণ।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি জালে ১৩০ মণ ইলিশ পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যপার। মাছগুলোর সাইজ প্রায় কাছাকাছি, অর্থাৎ ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম। আবার শুধুমাত্র ইলিশ মাছই ধরা পড়েছে ওই জালে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মাইগ্রেশনের জন্য এসব মাছ সাগরের অতি গভীর থেকে উপকূলের দিকে অর্থাৎ মিঠপানির দিকে চলাচল শুরু করছে।’
এ কর্মকর্তা জানান, সাগরে ৬৫ দিন সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ থাকার ফলেই এখন জেলেদের জালে সব ধরনের মাছ উঠছে। মাঝখানে কয়েকদিন ইলিশ কম ধরা পড়লেও এখন তাই কমবেশি ভালো পরিমাণে ইলিশ ওঠাতে পারছেন জেলেরা।
তিনি আরও বলেন, ‘গভীর সাগরে প্রচুর মাছ আছে, তবে সেসব স্থান চিহ্নিত করে জাল ফেললে তবেই বেশি মাছ ধরা পড়ে। সূর্য মাঝির ক্ষেত্রেও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু চট্টগ্রামের ট্রলার, তাদের জালও বেশ লম্বা এবং পরিচিত স্থান বাদ দিয়ে একটু গভীরে গিয়ে জাল ফেলার কারণেই তার জালে এত ইলিশ পড়েছে।’
এখন যেসব জেলে গভীর সাগরে জাল ফেলবে তাদের জালেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া অস্বাভাবিক বিষয় নয় বলে ধারণা এ মৎস্য কর্মকর্তার।
কলাপাড়া জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘আশা করছি, বৃষ্টি শুরু হলে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়বে।’