ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে রঙিন মাছের দুনিয়ায় দুই বান্ধবী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০২৪

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে রঙিন মাছের দুনিয়ায় দুই বান্ধবী

রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে আশফাকুন নাহারের পরিচয় ছোটবেলায়, তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়। দুজনের বাড়ি দুই জেলায়। দুজনই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। নিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিও। একসঙ্গে কিছুদিন চাকরি করার পর মানুষের জন্য কাজ করার কথা ভাবেন, সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসা করবেন।

২০১৭ সালে একদিন দুজন একত্রে বসে ভাবেন, চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় গেলে হাতে পর্যাপ্ত সময় পাবেন। যে সময়টা তাঁরা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবেন। সেই সিদ্ধান্তে অল্প দিনের ব্যবধানে তাঁরা চাকরি ছেড়ে বেছে নেন অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা। গড়ে তোলেন অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরির কারখানা, রঙিন মাছের খামার। দিয়েছেন বিক্রয় ও প্রদর্শনীকেন্দ্র, যার নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নছোঁয়া ফিশ ফার্মিং অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়াম’। এখন নিজেরাই কাচ কেটে অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি করছেন। যেখানে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে খাবার দেওয়া—সবই করেন তাঁরা। দুই বান্ধবী এখন রঙিন মাছের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি এ কাজ থেকে যে আয় করছেন, তা দিয়ে সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন। অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সাহায্য, মসজিদ নির্মাণ বা সংস্কারকাজে সহায়তা, শীতের সময় বস্ত্র বিতরণ, ঈদে অসহায়দের নতুন কাপড় দেওয়া থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করছেন।

রাবেয়া খাতুন (৫২) মাগুরার পারলা গ্রামের মৃত আসমত আলী শেখের কন্যা। তাঁরা চার বোন—হাসিনা বেগম, শাহনাজ বেগম, রেবেকা খাতুন ও রাবেয়া খাতুন। রাবেয়া সবার ছোট, বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। রাবেয়া মাগুরা সরকারি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক (পাস) পাস করেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। আশফাকুন নাহার (৪২) ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া এলাকার মৃত মুন্সী এনামুল হকের মেয়ে। একরামুল হক, এহসানুল হক ও এহতেশামুল হক নামে তাঁর তিন ভাই আছেন। এ ছাড়া এমরাতুন নাহার নামে বড় এক বোন আছেন। আশফাকুন সবার ছোট। তিনি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। তাঁরা দুজন সম্পর্কে খালাতো বোন।

কর্মজীবনের গল্প

১৯৯৭ সালে রাবেয়া প্রথম প্রশিকায় কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন পর যোগ দেন মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকে। ২০০৮ সালে যোগ দেন আদ-দ্বীন উইমেনস মেডিকেল কলেজের হিসাব বিভাগে। এখানে আগে থেকেই কাজ করতেন আশফাকুন নাহার। ৯–১০ বছর একসঙ্গে চাকরি করার পর মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে ব্যবসার চিন্তা শুরু করেন। আশফাকুন নাহার জানান, তাঁর বাবা পেশায় ঠিকাদার ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন। এটা দেখে তাঁরও ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছা হতো। পড়ালেখা শেষে ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলেও পুঁজির অভাবে চাকরিতে চলে যান।

রাবেয়া খাতুন জানান, সংসারের হাল ধরার মতো তাঁর কেউ ছিল না। তাই চাকরিতে যোগ দেন। আশফাকুন নাহারের প্রতিষ্ঠানে আসার পর দুজন থাকা–খাওয়া, চলাফেরা একসঙ্গেই করতেন। আশফাকুন নাহার প্রায়ই ব্যবসা করার কথা বলতেন। ২০১৭ সালে একদিন দুজন একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসা করবেন, রঙিন মাছের ব্যবসা। এ জন্য অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরির কারখানা, বিক্রির জন্য একটি শোরুম আর মাছ উৎপাদনের জন্য খামার করতে হবে। ওই বছরই আশফাকুন নাহার চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ব্যবসার প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। আর ২০১৮ সালে চাকরি ছেড়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন রাবেয়া খাতুন।

শুরুটা যেভাবে

ঝিনাইদহ শহরের কবি গোলাম মোস্তফা সড়কের পুরাতন কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাত শতক জমি আশফাকুন নাহারের বাবার। সেখানে প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছা নিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন আশফাকুন। বাবার দেওয়া সেই সাত শতক জমির ওপর কারখানা আর শোরুম গড়ে তোলেন। প্রথমে ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বরে তাঁদের এই স্বপ্ন ছোঁয়ার যাত্রা শুরু হয়। পাশাপাশি নিজেদের বাসার সঙ্গে মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করেন।

অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি ও বিক্রি

রাবেয়া খাতুন জানান, তাঁরা যখন এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, তখন এলাকায় একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি, বিক্রি, মাছের চাষ—সবই করেন তাঁরা। কাজের চাপ বাড়লে শ্রমিক নিয়োগ দেন। বর্তমানে মাসে অন্তত ১০টি অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি করছেন, বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে। একটি অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি করতে ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বাজারে বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। ঝিনাইদহ ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, মেহেরপুর এলাকায় তাঁদের তৈরি অ্যাকুয়ারিয়াম বিক্রি হচ্ছে।

তাঁদের মৎস্য খামারে ১৮ থেকে ২০ প্রজাতির ৫০ হাজারের বেশি মাছ রয়েছে। রাবেয়া জানান, এসবের সঙ্গে মাছের খাবারও বিক্রি করেন তাঁরা। তাঁদের এই আয় সংসারের খরচ আর মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন।