ঢাকা   সোমবার
৩১ মার্চ ২০২৫
১৬ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

জেলে পরিবারে নেই ঈদের আমেজ

মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে উপকূলের শুঁটকির চাতালগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০২, ২৬ মার্চ ২০২৫

মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে উপকূলের শুঁটকির চাতালগুলো

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গেল অমাবস্যার গোনে গভীর সাগরে মাছ ধরতে জাল ফেলে খালি হাতে উপকূলে ফিরেছেন দুবলার চরকেন্দ্রিক জেলেরা। মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে সাগর পারের বিভিন্ন জেলেপল্লির শুঁটকির চাতালগুলো।

চলতি মৌসুমের মধ্যে জেলেদের মাছ ধরার বাকি সময় আছে আগামী পূর্ণিমার গোন। এই গোনে মাছ পাওয়া গেলেও পুরো মৌসুমের সংকট কীভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন মৎস্যজীবীরা। সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের ঈদ উৎসব পালন করবেন কীভাবে আর দেনা পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাদের পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। 

সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে ও বন বিভাগের তথ্যমতে, দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই মৌসুম। মৎস্য আহরণকালে জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এ সময় সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। 

সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে হতাশা। মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। সর্বশেষ পূর্ণিমার গোনেও মাছের তেমন দেখা পাননি তারা। 

গেল গোনে সাগরের সুন্দরবন উপকূলে পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে জেলেরা ট্রলার ও জাল নিয়ে গভীর সাগরে যেতে পারেননি। কেউ কেউ প্রতিকূল বাতাস উপেক্ষা করে সাগরে গিয়ে জাল ফেললেও তেমন মাছ পাননি। ট্রলারের তেল খরচও ওঠেনি।

দুবলার চরের মোংলা রামপাল মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির শেখ জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সাগরের মাছ ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানের মতো মাছের সংকট কখনোই দেখেননি। তিনি বলেন, পশ্চিমা বাতাসের কারণে কোনো মাছ পড়ছে না। বাতাসের তীব্রতায় জেলেরা সাগরের গভীরে যেতে পারেনি। 

সাগরের অধিকাংশ জেলে ও মৎস্যজীবীর একই অবস্থা বলে দাবি করেছেন জাকির শেখ। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ঈদ উদযাপন দূরের কথা, লগ্নির টাকা লুভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাই নগরের কামাল হোসেন দুবলারচরের আলোর কোলের মৎস্যজীবী। তিনি জানান, তাঁর তিনটি ট্রলারে মৌসুমে প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা করে দাদনে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সাগরে এসেছেন। এবার মৌসুম শেষ হতে চললেও আয় করেছেন সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো। লাভ দূরের কথা, পুঁজির অর্ধেকও এখন পর্যন্ত তোলা যায়নি। এ অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে কীভাবে তা পরিশোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

কথা হয় সাগরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাসের কারণে গেল গোনে সাগরে মাছ ধরা পড়েনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাগরে মাছের সংকট বেশি দেখা গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা খাঁ খাঁ করছে। এ অবস্থায় অনেক মৎস্যজীবীর বাড়িতে ফিরে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে।

এবারের মৌসুমে সাগরে মাছের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন বন বিভাগের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ সংকট থাকায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। 

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।

 

সর্বশেষ