ঢাকা   রোববার
০৯ মার্চ ২০২৫
২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ রমজান ১৪৪৬

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় বাড়ছে সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুঁটকির কদর

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১১:১৭, ২ মার্চ ২০২৫

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় বাড়ছে সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুঁটকির কদর

সাতক্ষীরা জেলার শুঁটকি মাছের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে সাতক্ষীরার মিঠা পানির শুঁটকির বাজার।  জেলায় সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাত করণের কর্মযজ্ঞ। ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুঁটকির বাণিজ্যেও এ জেলায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে জেলার মিঠাপানির এই শুঁটকি।

স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, লবণ ছাড়া অন্যকোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তারা প্রথমে আড়ৎ থেকে স্বল্প খরচে মাছ ক্রয় করেন। এরপর তা পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে লবণ লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে দেন। এরপর তা পুনারায় পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেন। এইভাবে সকাল থেকে কাজ শুরু হয়। দুপুরে ও বিকেলে ওই মাছ এপিঠ-ওপিঠ করে উল্টে সন্ধ্যা হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন। এভাবে সারাদিনের চলে তাদের কর্মযজ্ঞ।

প্রতি বছরই ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতার মাছের আড়ৎগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশিয় ছোট-বড় মাছ বিক্রয়ের জন্য আনা হয়। এই মাছের একটি বড় অংশ অবিক্রিত থেকে যায়। এই অবিক্রিত মাছ সংগ্রহ করে তা থেকেই তৈরি হয় শুঁটকি।

সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতা সড়কের একটু নিচে গেলে দেখা যায়, সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও ছোট পুঁটিসহ দেশিমাছ কেটে বাঁশের মাচায় শুকাতে দেওয়া রয়েছে। চাতালের পাশে ছাউনির নিচে মাছ নিয়ে বসেছেন কয়েকজন নারী। তারা মাছ কেটে তা বাছাই করে টুকরিতে রাখছেন। আবার কেউ কেউ মাচায় থাকা ভেজা মাছগুলোও এপিঠ-ওপিঠ করে উল্টে রাখছেন। চাতাল ঘরে রাখা শুঁটকিগুলো আবার কেউ কেউ টুকরিতে ভরে মাথায় করে এনে মাচায় রোদে শুকানোর জন্য আনছেন। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোয়া, রোদে শুকানো, মাচা থেকে চাতালে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শ্রমিকরা।

জেলার তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি শুঁটকির আড়ৎ বানিয়েছি। প্রতি মাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকি।

বিনেরপোতায় আরো একটি খামারে স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তবে এখানে পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও এখনো স্থানীয় কোনো বাজার সৃষ্টি হয়নি। ফলে বিক্রির জন্য শুঁটকিগুলো জেলার বাইরের মোকাম গুলোয় পাঠাতে হয়। এতে লাভের পরিমাণ কমে যায়। তবে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আমরা সরবরাহ করে থাকি।

সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে তিনি সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকিমাছ সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের লোকজন সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি খান। সে কারণে, উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। প্রতিবেশী দেশ গুলোতে পুঁটিমাছের শুঁটকির চাহিদা থাকায় সেখানে এটি রফতানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে বলে তিনি আরো জানান। আর এ জন্য সরকারী সহযোগিতার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি. এম সেলিম জানান, মিঠাপানির শুঁটকিমাছ উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় বছরে প্রায় এক লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। সাধারণ পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ঘটালে শুটকির গুনগতমান আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মেকানিক্যাল ড্রায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব এই শুটকি ।

তিনি আরো জানান, এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। শীত মৌসুমে মৎস্য ঘেরে ধান চাষ করার প্রাক্কালে খুব স্বল্প মূল্যে চাষীরা ঘেরের মাছ বিক্রি করে দেন। সে সময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাই আমরা শুঁটকি উৎপাদন বৃদ্ধি ও এর গুণগত মান উন্নয়নে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছি।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে