ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশের মোট ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন, জেলে কমেছে পাঁচ চতুর্থাংশ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১৯ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১২:১৩, ১৯ মার্চ ২০২৪

দেশের মোট ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন, জেলে কমেছে পাঁচ চতুর্থাংশ

দেশের মোট ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। খাল, বিল ও নদীতে এখন আর আগের মতো দেখা মেলে না টেংরা, পুটি, বোয়াল, ভেটকি, বাইম ইত্যাদি মাছের৷ এই অবস্থায় গত ১০ বছরে নরসিংদীতে পেশাদার জেলের সংখ্যা কমেছে পাঁচ চতুর্থাংশ। তবে, চাষের মাছে লাভের মুখ দেখছেন জেলার চাষিরা। জেলায় বছরে চাষ হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকার মাছ।

ঋতু হিসেবে শীত বিদায় নিলেও আড়িয়াল খাঁর বুকে এখনও কুয়াশার দেখা মেলে। সকালটা বেশ ঠাণ্ডা থাকে। শান্ত স্বভাবের নদীতে শোনা যায় কেবল বৈঠা বাওয়ার শব্দ।

এ জলাশয় ঘিরে যাদের জীবিকা ছিল, বয়সে প্রবীণ হলেও এখনও নাও ভাসান- প্রত্যাশা এবং ভালবাসার টানে।

আশপাশের মানুষ জানে দূষণের শিকার, স্রোতহীন ও জৌলুসহারা আড়িয়াল খাঁ। দাপিয়ে বেড়ানো নৌকাগুলোর অনেকগুলোই খুঁটোয় বাঁধা ঘাটে। তবে নদীটি বুড়িয়ে গেলেও একেবারেই হয়তো ফুরিয়ে যায়নি। এমন আশায় এখনও কিছু জাল ডুবিয়ে চলে মাছের সন্ধান।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেখা মেলে কয়েকটি মাছের। জালের ঝাঁকিতে এখন আর ঝাঁকা ভরে না। দেশি মাছ অনেকটাই রূপকথা হতে চলেছে। তাই নতুন প্রজন্মকে চিনিয়ে রাখার চেষ্টা, কেমন ছিলো ফলি, মেনি, মলা ঢেলা আর নারকেলিরা।

জেলেরা বলেন, 'পাঁচ ভাগের একভাগ এখন মাছ পাওয়া যায়। আগে অনেক মাছ পাওয়া যেত।'

সমস্যা শুধু জেলেদেরই নয়, মাছের আশায় বসে থাকা চিলেরও কপালে জোটে না ছোঁ মেরে থাবায় করে মাছ নিয়ে ওড়ার সুযোগ। কবিতার কানা বগির মত এখানকার বকেরও একটা পুঁটি পেতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। গেরস্থের হাঁসেরও মাছ খুঁজতে হাঁসফাঁস অবস্থা। দেশি মাছ শূন্য জলাশয় কেবল স্মৃতির কাছে উজ্জ্বল। একই অবস্থা মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও হাড়িধোয়াসহ জেলার সবগুলো নদীর।

স্থানীয়রা বলেন, 'দূষিত পানি থাকলে মাছ কোনোভাবেই আসবে না নদীতে।'

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশের মোট ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। যেগুলো পাওয়া যেত খাল, বিল এবং নদীতে।

পুকুর-ডোবাতেও আগে পাওয়া যেত হরেক রকম দেশি মাছ। এখন তার জায়গা দখলে নিয়েছে কার্প জাতীয় মাছেরা। গত ১০ বছরে জেলায় পুকুরে মাছ চাষ বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে প্রায় ১৫ হাজার চাষির ৷ এখানকার মাছ যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এছাড়া প্রতিটি খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ থেকে ৫০ জন মানুষের।

নরসিংদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফয়সাল আজম বলেন, 'মানুষের সৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কিছু কারণ  আছে। জলবায়ু পরিবর্তন বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। আবার অবৈধভাবে মাছ শিকারের প্রবণতা ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'

গত ৩ বছরে মাছ চাষে গড় বিনিয়োগ বছরে ৫৫০ কোটি টাকা। যেখান থেকে বাৎসরিক উৎপাদন হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ। দেশি মাছের জন্য প্রয়োজনে অভয়ারণ্য তৈরির দাবি স্থানীয়দের।