নানা সংকটে জর্জরিত শরীয়তপুরের একমাত্র রেনু ও পোনা উৎপাদনকারী সরকারি হ্যাচারি। জেলার মৎস্য খামারিদের সুবিধার্থে সরকারিভাবে হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। বাধ্য হয়ে খামারিদের নির্ভর করতে হয় অন্য জেলার ওপর। সংকট সমাধানে উদ্যোগ না নিলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে জেলার একমাত্র রেনু-পোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
দেশে খামারভিত্তিক মাছ উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে শরীয়তপুর। জেলায় রয়েছে ৫ শতাধিক মৎস্য খামার। লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে খামারির সংখ্যা।
মৎস্য খামারিদের সুবিধার্তে ২০১৯ সালে ৬ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় গোসাইরহাট কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স। কিন্তু শুরু থেকেই নানান সংকটে জেলার একমাত্র রেনু ও পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিটি।
উৎপাদন বন্ধ থাকায় অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে এখানকার স্থাপনা ও যন্ত্রাংশ। রেনু ও পোনা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কক্ষটি ব্যবহার হচ্ছে কর্মচারীদের রান্নাবান্না ও বাসস্থান হিসেবে। এছাড়া পানি সরবরাহের জন্য যে পাম্প যন্ত্রটি বসানো হয়েছে শুরুর দিন থেকেই বিকল সেটি। অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে প্রতিষ্ঠানটি।
হ্যাচারির কর্মচারীদের একজন বলেন, ‘এখানে রেণু উৎপাদন হচ্ছে না। আমাদের নলকূপের সমস্যা।’
আরেকজন বলেন, ‘আমাদের পানির সমস্যার কারণে আমরা মাছ উৎপাদন করতে পারছি না ভালোভাবে।’
এছাড়া পোনা উৎপাদনে নির্মিত কংক্রিটের চৌবাচ্চার গভীরতা বেশি হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে চৌবাচ্চার পানি উপচে ভেসে যায় পোনা।
জেলায় সরকারি- সরকারিভাবে আর কোনো হ্যাচারি গড়ে না ওঠায় মাছ চাষিদের নির্ভর করতে হয় ময়মনসিংহ বা যশোরের উৎপাদিত রেনু-পোনার ওপর। এতে সঠিক সময়ে পোনা সংগ্রহ করতে না পারাসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য খামারিদের একজন বলেন, ‘বর্তমানে ময়মনসিংহ থেকে পোনা আনতে হয়। এতদূর থেকে আনার ফলে দুইদিনের বেশি সময় নষ্ট হয়ে যাই। আবার যাতায়াতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।’
হ্যাচারিটিতে রেনু ও পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দাবি নির্মাণ ত্রুটির কারণে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা এবার পরিকল্পনা করেছি আরেকটি ছোট ডিপ টিউবয়েল বসিয়ে পোনা উৎপাদন শুরু করবো।’
সংকট সমাধানে উদ্যোগ না নিলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে জেলার একমাত্র রেনু-পোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।