উত্তর জনপদের মৎস্যভান্ডার নওগাঁর আত্রাইয়ে উৎপাদিত দেশীয় শুঁটকির কদর রয়েছে দেশজুড়ে। শুধু তাই নয়; ভারতেও রয়েছে কদর। পুঁটি, খোলসানি, চান্দা, রাইখর, সাটিসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। তবে এ বছর দেশীয় মাছের অভাবে শুঁটকি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কাক্সিক্ষত লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ায় অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন এ পেশা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর আত্রাইয়ে শুঁটকি উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যান্য বছর শুঁটকির ব্যাপক সরব থাকলেও এবার নেই তেমন আগ্রহ। এজন্য দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। শুঁটকি তৈরিতে খরচের সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। এবার মাছের আমদানি কম। অনেক গৃহবধূ এই শুঁটকি পল্লীতে কাজ করে থাকেন। উত্তরের মৎস্যভান্ডার নওগাঁর আত্রাই। প্রতিদিন শত শত টন মাছ আত্রাই থেকে রেল, সড়ক ও নৌপথে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হয়।
সে অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদনে আত্রাইয়ে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নীলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের ১৫-২০টি জেলায় বাজারজাত করা হয় এখানকার মাছ। আর এ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে শতাধিক পরিবার। কিন্তু এবার দেশি মাছের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এসব শুঁটকি ব্যবসায়ীরা হতাশ। কাঁচা মাছের আমদানি কম, বাজারে মূল্য বেশি তাই শুঁটকির বাজার ধস। কাঁচা মাছের আমদানি কম, বাজারে মূল্য বেশি, বিলম্বে বন্যা, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ নিধনের ফলে দেশি মাছের এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এক মণ পুঁটি শুকিয়ে ১৫ কেজি, চার মণ টাকি থেকে এক মণ এবং তিন মণ খলিসা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়। বর্তমানে শুঁটকি ছোট পুঁটি ১৫০ টাকা, বড় পুঁটি ৪০০ টাকা, টাকি ৪০০-৪৫০ টাকা এবং খলিসা ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আত্রাইয়ের ভরতেঁতুলিয়া শুঁটকি পল্লীর কারিগর পারতি রানি শীল বলেন, বাজার থেকে কাঁচা মাছ কিনে নিয়ে আসার পর ড্রামের মধ্যে লবণ দিয়ে রেখে দিতে হয়। এরপর পরিষ্কার করে চাটাইয়ের ওপর রোদে শুকাতে হয়।
গুঁড়া মাছের আঁশ ছাড়ানোর দরকার হয় না। এরপর বিভিন্ন রকম প্রকারভেদ করে সৈয়দপুর নিয়ে যাওয়া হয়। আত্রাইয়ের শুঁটকি ব্যবসায়ী ফিরোজ প্রামাণিক বলেন, বহুদিন থেকে ব্যবসা করছি। এবার বর্ষা কম হওয়ার কারণে আমদানি কম। গত বছরের তুলনায় শুঁটকি ও মাছ উভয়ের দাম বেশি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আমিমুল এহছান বলেন, এবার পানি কম থাকায় মাছের সংকটে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। শুঁটকির সঙ্গে জড়িতদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রতি বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আর আত্রাই এর শুঁটকির গুণগতমান অনেক ভালো ও স্বাস্থ্যকর। আর প্রতি বছর নওগাঁ জেলা থেকে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি রপ্তানি হয় দেশে-বিদেশে।