চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পুকুর ও প্রাকৃতিক উৎস খাল-বিল, নদ-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ২০১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। যার মোট আর্থিক মূল্য গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৮১ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে পুকুরে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। খাল-বিলে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৩১ দশমিক ২ মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ১০৮ কোট ৯৩ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং নদ-নদীতে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন মাছের আড়তসহ পুকুর থেকে প্রায় ২৫০ ট্রাক মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এ জেলার উৎপাদিত মাছ। এ ছাড়া উৎপাদিত মাছে জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন জেলার সাতটি উপজেলার অন্তত ৪৩ হাজার ৯২৯ জন মাছ উৎপাদনকারী ও মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে, এ জেলায় মোট উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয় ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলার তালিকায় রয়েছে নাটোর।
নাটোর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৩১ হাজার ৩২০টি, মৎস্যচাষীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৫০ জন এবং মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯ জন। প্রতিজনের বা মাথাপিছু প্রতিদিন গড়ে ৬০ গ্রাম হিসাবে জেলার ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯২১ জন মানুষের মাছের খাদ্য চাহিদা ৪০ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন। বছরে মোট চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন মাছ। যার আর্থিক মূল্য ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে জেলায় মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পুকুরে ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৯ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ৮ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন, লালপুরে ৫ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন।
গত বছর জেলার সাত উপজেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ১৮২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৮ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ৮ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন, লালপুরে ৫ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার বিল থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৩১ দশমিক ০২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০২ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৩৯৭ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ১ হাজার ৫১২ দশমিক ০৬ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪৮১ দশমিক ০২ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ১ হাজার ১২৮ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন ও লালপুর উপজেলায় ৮ দশমিক ০৮ মেট্রিক টন। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ১০৮ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার টাকা।
অপরদিকে, নদ-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ০৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৭ দশমিক ০২ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৯১ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ১২১ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪১ দশমিক ০৮ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ১০১ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন ও লালপুর উপজেলায় ৩৮৪ দশমিক ০৭ মেট্রিক টন। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলা হচ্ছে নাটোর। এ জেলায় প্রতি বছর ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উৎস খাল, বিল, নদ-নদী থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, এ জেলায় উৎপাদিত মাছ সরাসরি ভারতেও রপ্তানি হয়। ফলে বছরজুড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্তত ২৫ হাজার ৮৫০ জন মৎস্য চাষীসহ সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যে আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে মাছ।