শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে। সেই মাছ নড়িয়ার সুরেশ্বর মাছ বাজারে বিক্রি করছেন জেলেরা। এক সপ্তাহ ধরে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে। একসঙ্গে এত পাঙাশ এখানে কখনো ধরা পড়েনি বলে দাবি জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের। গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক জেলেনৌকা গড়ে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকার পাঙাশ মাছ বিক্রি করেছে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে অন্তত ২৬ হাজার জেলে আছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময় নদীতে মাছ শিকার করেন। ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ ছিল। ৪ নভেম্বর ভোর রাত থেকে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার শুরু করেন। ওই দিন থেকেই জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে।
পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের নড়িয়ার চরআত্রা, নওপাড়া ও ঘরিসার এবং ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, তারাবুনিয়া ও চরভাগা এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেরা পাঙাশ শিকার করছেন। সারা রাত মাছ ধরে সকালে তা বিক্রি করছেন নড়িয়ার সুরেশ্বর মাছের পাইকারি বাজারে।
সোমবার সকালে সুরেশ্বর মাছবাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১৫০টি জেলেনৌকা পাঙাশ মাছ নিয়ে বাজারে এসেছে। এসব মাছের প্রতিটির ওজন ৫ থেকে ১২ কেজির মতো। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা ওই মাছ ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুরের বিভিন্ন পাইকারের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দামে। বাজারের ৩০টি পাইকারি দোকানে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।
ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়নের বোরোকাঠি এলাকার জেলে মোবারক হোসেন ২৫ বছর ধরে পদ্মা নদীতে মাছ ধরছেন। তিনি বলেন, কখনো বছরজুড়ে মাছ শিকার করে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারেননি। অথচ গত এক সপ্তাহে তিনি পাঙাশ মাছ বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন।
নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি এলাকার জেলে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি টানা ২২ দিন নদীতে যাননি। ৪ নভেম্বর থেকে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। ইলিশের পরিবর্তে এবার তাঁরা প্রচুর পাঙাশ মাছ পাচ্ছেন। গত সাত দিনে তিনি ছয় লাখ টাকার মাছ ধরেছেন। এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা সঞ্চয় হয়েছে।
সুরেশ্বর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মোকলেছ মোল্লা বলেন, পদ্মা নদীর তীরে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের বাজার সুরেশ্বর মাছবাজার। এ বাজারে অন্তত ৪০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি পাঙাশ পাওয়া যায়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার পাঙাশ মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান বলেন, মাছ সাধারণত খাবারের সন্ধানে ও প্রজননের তাগিদে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নদীতে মাছ শিকার বন্ধ ছিল। তখন মাছ নির্বিঘ্নে স্থানান্তরের সুযোগ পেয়েছে। মিঠাপানিতে ইলিশের সঙ্গে পাঙাশও এসেছে। তাই জেলেদের জালে এই মুহূর্তে এত বেশি পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে।