ঢাকা   মঙ্গলবার
২৬ নভেম্বর ২০২৪
১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে চিলুয়া যেন মাছের বধ্যভূমি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:১১, ১০ নভেম্বর ২০২৪

অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে চিলুয়া যেন মাছের বধ্যভূমি

শাহজালাল সার কারখানা লিমিটেডের (এসএফসিএল) অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফেঞ্চুগঞ্জের খাল-বিল, জলাশয়সহ ফসলি জমি। কারখানার বিষাক্ত গ্যাস আর বর্জ্যে দূষিত হয়ে নিয়মিত মরছে চিলুয়া বিলের মাছ। বিলের পানিতে ভেসে থাকা মরা মাছ দেখে মনে হয় এ যেন মাছের বধ্যভূমি।

রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নের জাদুরগুল খাসমহল ও নিজগাঁও এলাকায় গ্যাস ও বর্জ্যের কারণে গাছপালা, ফসল নষ্ট হচ্ছে। বিষাক্ত হয়ে গেছে এলাকার বাতাস, পানি, মাটি। এরই মধ্যে বিষের প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মৎস্যসম্পদ। তিন বছর আগে ক্ষতিগ্রস্তরা এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, কারখানার অ্যামোনিয়া বর্জ্য নিজস্ব লেগুনে মজুত করে নষ্ট করে ফেলার জন্য। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ তা না করে বর্জ্য কারখানার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালে ছেড়ে দিচ্ছে। খালটি এওলাছড়া দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলুয়া ও চাতল বিলে গিয়ে মেশে; যার কারণে বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে এসব জলাধারেও।

শাহজালাল সার কারখানার বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের বর্জ্যমিশ্রিত পানি ফেঞ্চুগঞ্জে চিলুয়া বিলে ঢুকে পড়ায় তিন মাস ধরে সেখানে দফায় দফায় মরছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রায়ই খালের পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায় মরা মাছ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার গ্যাসবর্জ্যজনিত কারণে চিলুয়া বিলসহ আশপাশের বিলগুলোতে বুধবার সকাল থেকে বোয়াল, সরপুঁটি, বাউশ, কাতলা, আইড়, টেংরা মাছসহ ঝাঁকে ঝাঁকে দেশীয় প্রজাতি মরা মাছ ভেসে উঠেছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চিলুয়া তিনডুবি বিল, চাতল ও এওলা ছড়ায় হাজার হাজার মরা মাছ পানিতে ভাসছে। এলাকার হতদরিদ্র লোকজন এসব মাছ নিয়ে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে ভয়াবহ বিষক্রিয়া ও প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এওলাছড়া দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলুয়া বিল ও চাতল বিলে গিয়ে পড়ছে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য; যার কারণে পানি দূষিত হয়ে এসব খালের মাছ মরে যাচ্ছে। কচুয়াবহর গ্রামের হেলাল উদ্দীন শামিম জানান, সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে চিলুয়া বিলের মাছ মরে সাফ হয়ে গেছে। পানির ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে ব্যাপকভাবে।

বিলের ইজারাদার বারহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক অবনি বিশ্বাস জানান, ইজারা নেওয়া চিলুয়া বিলে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের চাষ অবমুক্ত করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ত্রিশ লাখ টাকারও বেশি। কারখানার বর্জ্যে বিলের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। মরে গেছে সব মাছের পোনা। তারা পথে বসে গেছেন।

মাইজগাঁও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান লিটন জানান, তিন বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য কারখানার ভেতরে নষ্ট করার কথা বললেও তা মানা হয়নি। গত দশ বছর ধরে হাওর বা বিলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এওলাছড়া খালে সেই বিষ ছড়িয়ে দিয়ে তারা সচেতনভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশ করছে। জমির ফসল, বিলের মাছ সব মরে শেষ।

এ ব্যাপারে শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াবুল হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে তা যাচাই করে গ্যাস ও বর্জ্য কারখানার ভেতর নষ্ট করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীতে এমন ক্ষয়-ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বপন কুমার ধর জানান, কারখানা থেকে নির্গত শিল্পবর্জ্যে মাছের ক্ষতি হয়। বিষক্রিয়ায় মরা মাছ খেলে ভয়াবহ রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক বদরুল হুদা জানান, চিলুয়া বিলের পানি পরীক্ষার পর বিষের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষকে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তবে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করে বিষয়টি গা বাঁচিয়ে নেয়।

সর্বশেষ