ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৭ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

কোরবানির আগে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৫ মে ২০২৪

কোরবানির আগে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা

তীব্র গরমে গবাদিপশুর চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। আর লালন-পালনে খরচ বাড়লেও দুধ ও মাংসের উৎপাদন কমছে। কোরবানির আগে এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

গ্রীষ্মের খরতাপ, রোদ ঝলসানো দুপুর, নিরুপায় আশ্রয় তখন গাছের ছায়া। তবুও হাঁপায় গবাদিপশু। কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের নতুন চর খাড়াকান্দি গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে গরুর খামার। খামারিরা পশুর পরিচর্যায় দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে।

এদিকে গরমে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি। পশুর চামড়ায় সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষত, ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছে। গোল আকৃতির ভাইরাসজনিত এই রোগের নাম লাম্পিং স্কিন ডিজিজ। যা এ বছর ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে।

এক খামারি বলেন, ‘তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে গরুর হঠাৎ জ্বর ওঠে। জ্বর হওয়ার পরই এই রোগ দেখা দিচ্ছে। আমার এ এলাকায় সব খামারেই গরুর ক্ষতরোগের সমস্যা হয়েছে।’

একই গ্রামের খামারি উকিল উদ্দিন কয়েকটি গরু নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায়। এ রোগে গত বছর একটা গরু হারিয়েছেন। এবারও শঙ্কা কাটছে না তার।

তীব্র দাবদাহে উন্নত জাতের গরুর যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন ঠান্ডা রাখতে খামারে অনবরত ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা। কিছুক্ষণ পরপর পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। দিনে কয়েকবার গোসলের মাধ্যমে ঠাণ্ডা রাখতে হচ্ছে পশুর শরীর।

নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সহকারি শামসুল আলম বলেন, ‘হঠাৎ করেই খামারিরা ফোন দেয়। এই গরমে অনেক খামারে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি নানাবিধ রোগ দেখা দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, আমি যেতে যেতে অসুস্থ গরু মারা গেছে। গত কয়েকদিনে ৫ থেকে ৭টি গরু মারা গেছে।’

অতিরিক্ত গরমে গবাদিপশুর যখন খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে তখন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দুধ উৎপাদন কমেছে। আর মাংস উৎপাদন কমছে প্রতিদিন। যা প্রভাব ফেলবে আগামী কোরবানিতে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘গত ২০ দিনেও আগে গরুর যে ওজন ছিল এখন তা কমে গেছে। আর এই গরমে গরু কম খাচ্ছে। এতে করে আমাদের দুশ্চিন্তাও বাড়ছে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা জুয়েনা বলেন, ‘উন্নত জাতের গরু বাংলাদেশের তাপমাত্রায় কম সহনশীল। তাই ১৫ লিটারের দুধ দেয় এমন গরুকে দিনে কমপক্ষে ৬০ লিটার পানি পান করাতে হবে। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে।’

লাম্পিং স্কিন ডিজিজ রোগ বহনকারী মশা-মাছির প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে নিয়মিত খামার পরিষ্কারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (সম্প্রসারণ) পরিচালক ডা. শাহিনুর আলম বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দাবদাহের প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় গবাদি পশুগুলোকে আবদ্ধ জায়গায় না রেখে ছায়াযুক্ত খোলা স্থানে রাখলে ভালো হয়।’

দেশে বেশিরভাগ খামার তৈরি হয় টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে, প্রখর রোদে তা আরও উত্তপ্ত হলে তাপমাত্রা আর বেড়ে যায়। এজন্য তাপ সহনশীল খামার তৈরির পরামর্শ দিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা।

প্রতিটি উপজেলায় একটি করে জলবায়ু সহিষ্ণু খামার শেড তৈরি করছে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। যেখানে খোলামেলা পরিবেশে গবাদি পশুর খামার তৈরির ধারণা পাবেন স্থানীয় খামারিরা।

সর্বশেষ