পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী অন্যতম গ্যাস কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ চলতি ২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার এই নিঃসরণের জন্য দায়ী বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক দপ্তর।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বুধবার শুরু হয়েছে কপ টোয়েন্টিনাইন ক্লাইমেট সামিট। সম্মেলনের শুরুতে গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্ট নামের একটি প্রতিবেদন পাঠ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন জলবায়ু গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রস্তুত এ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে মোট নিঃসৃত হয়েছিল ৪০ হাজার ৬০০ কোটি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড। এর অর্থ, ২০২৩ সালে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মিশেছে এই পরিমাণ বাড়তি কার্বন-ডাই অক্সাইড।
তবে চলতি বছর নভেম্বর শেষ হওয়ার আগেই মধ্যেই এই রেকর্ড অতিক্রম হয়ে গেছে। গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাগাদ বিশ্বে নিঃসৃত কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ পৌঁছাবে ৪১ হাজার ৬০০ কোটি টন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বায়ুমণ্ডলে যোগ হওয়া অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে ১ হাজার কোটি টন।
এই বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের প্রধান কারণ তিনটি। এগুলো হলো কয়লা, জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যাবহার, দাবানল এবং গাছপালা কর্তন ও বনজঙ্গল ধ্বংস করা।
গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্টের প্রধান লেখক এবং এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত জলবায়ু গবেষক পিয়েরে ফ্রিডলিংস্টেইন রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারের হ্রাসের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচনা এবং তৎপরতা সত্ত্বেও এর ব্যবহার কিন্তু বাড়ছে। তবে এখনও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি আমরা কার্বন-ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি, তাহলে অবধারিত ভাবেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদেরকে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।”
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ টোয়েন্টিনাইন সম্মেলনে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্যরাষ্ট্র। সেই চুক্তির মূল শর্ত ছিল যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রতি বছর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনবে এবং বিশ্বের তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না।
তবে বাস্তবে ঘটেছ তার বিপরীত। গত এক দশকের প্রায় প্রতি বছরই বেড়েছে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যাপকমাত্রায় বনজঙ্গল ধ্বংসও এজন্য অনেকখানি দায়ী।
বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন। গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নিঃসরণ কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইউরোপের কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে নিঃসরণ বেড়েছে চীন এবং ভারতের। চীনের কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ এবং ভারতের বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। সূত্র : রয়টার্স