যুক্তরাজ্যের শিক্ষার সুযোগ ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিশ্চিতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কলারশিপ ফর ইউমেন ইন স্টেম’ প্রোগ্রাম চালুর ঘোষণা দিয়েছে। স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ে যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর করতে আগ্রহী নারীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বৈচিত্র্য, ভিন্নমত ও উদ্ভাবন নিশ্চিত ও প্রসার করতে স্টেম খাতে নারীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। নারীদের অংশগ্রহণ কেবল লিঙ্গবৈষম্য কমিয়ে আনবে না, তাদের অনন্য দক্ষতা কর্মক্ষেত্রকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে; যা সর্বোপরি সমাজকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেন্ডার অ্যাসেসমেন্ট ২০২১ এর হিসাব অনুযায়ী, দেশের স্টেম পেশাজীবীদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী। গবেষণায় দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের স্টেম বিষয়ে ভর্তির হার মাত্র ৩৮ শতাংশ, আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির হার ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর স্টেম বিষয়ে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫টি স্কলারশিপ ঘোষণা করা হয়েছে। কুইন মেরী ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি, গ্রিনিচ ইউনিভার্সিটি, দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউথ্যাম্পটন ও কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের এই ৫টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নের ক্ষেত্রে স্কলারশিপের সুযোগ থাকছে। যুক্তরাজ্যের সমৃদ্ধ স্টেম খাতে অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ দেশে গবেষণা ও উদ্ভাবন এগিয়ে নিতে এবং এই খাতে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করতে বৃত্তিপ্রাপ্তদের দক্ষ করে তুলবে এই স্কলারশিপ। সাইটেবল রিসার্চের (গবেষণা) ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য বর্তমানে বিশ্বের ৩য় অবস্থানে রয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে ভিত্তিক সমস্ত প্রকাশনার ৫৫.২ শতাংশই সম্মিলিত প্রচেষ্টার (সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক গবেষণা) মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা হয়।
এই স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি, স্টাইপেন্ড, ভ্রমণ খরচ, ভিসা, হেলথ কভারেজ ফি ও ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ সাপোর্ট থাকছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ডেটা সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, ইনটেলিজেন্ট হেলথকেয়ার এবং অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব এডুকেশন বাংলাদেশ তৌফিক হাসান বলেন, “বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনংসংখ্যাই নারী, প্রতিনিধিত্ব করছেন গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় মেধাশক্তির। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান ও গবেষণায় নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেবল ধারণা হিসেবে নয়, বরং মানবজাতির সমৃদ্ধির জন্যই এখন লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা জরুরি। উইমেন ইন স্টেম স্কলারশিপের মতো আমাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য স্টেম বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান, তাদের সক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান নিশ্চিত করা।”
২০২০ সাল থেকে এই প্রোগ্রামটি ৩০০টি’রও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করেছে। বৈশ্বিকভাবে ২০২৩-২৪ সেশনে নির্ধারিত কোর্সে ৯২জন শিক্ষার্থী এই সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্বায়নের এই যুগে নারীদেরকে সফল হতে এবং স্টেম খাত সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অব্যহত প্রতিশ্রুতির অংশ এই স্কলারশিপ।
নারীদের নেতৃত্ব বিকাশ এবং নিজ দেশ ও যুক্তরাজ্যে স্টেম বিষয়ে অধ্যয়নরত নারীদের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে স্টেম খাতে ক্যারিয়ার গঠন ও অবদান রাখার জন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করাই এই স্কলারশিপের লক্ষ্য। নারীরা ডিপেন্ডেন্ড সহ (নির্ভরশীল সদস্য) এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে তারা অতিরিক্ত কিছু সহযোগিতাও পাবেন।
এবছরের মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে আবেদন গ্রহণের শেষ সময় যা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা, কোর্সের তালিকা, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের শেষ সময়, ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বা অন্য যেকোনো তথ্যের জন্য ভিজিট করুন - https://www.britishcouncil.in/study-uk/scholarships/womeninstem- scholarships