ঢাকা   বুধবার
০২ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

লোকসানে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা, নেই ঈদ আনন্দ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৩০ মার্চ ২০২৫

লোকসানে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা, নেই ঈদ আনন্দ

মানিকগঞ্জে জেলার অন্যতম বড় পেঁয়াজের আড়ত হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারে অবস্থিত। সারাবছর এখানে পেঁয়াজ কেনাবেচার চলে। এবার পেঁয়াজ চাষিরা লোকসানের মুখ দেখায় ঈদ আনন্দ ম্লান হয়েছে তাদের।

কৃষকরা জানান, কেউ কেউ ১ বিঘা থেকে ২০ বিঘা পর্যন্ত পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কারো লোকসান অর্ধ লাখ কারো আবার কয়েক লাখ। ফলে লোকসানে থাকায় ঈদের কেনাকাটা করতে পারেননি অনেকেই।

তারা আরও জানান, একমাস আগে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের লোকসান হয়েছে। আশায় ছিলেন হালি পেঁয়াজে লাভবান হবেন। তবে হালি পেঁয়াজেও লোকসানে তারা। মূলত কৃষকদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ উত্তোলনের মজুরি খরচের জন্য।

এদিকে আড়তদাররাও শংকায় লোকসান নিয়ে। তবে লোকসান ঠেকাতে কৃষকদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের হাঁপানিয়া (সুরাই) এলাকার শাহজাহান (৫৮) মিয়া বলেন, “গত বছর এবং তার আগের বছর পেঁয়াজ এ ভালো লাভবান হওয়ায় এবার ২০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। তবে এবার প্রতি মণ পেঁয়াজে ৩০০-৪০০ টাকা তার লোকসান হবে। এখন সব পেঁয়াজ বিক্রি করলে চার-পাঁচ লাখ টাকা লোকসান হবে। তবে কামলা (শ্রমিক) খরচের জন্য পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।”

ওই উপজেলার মহিশা খোলা গ্রামের উজ্জ্বল বলেন, “ধার দেনা করে ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। প্রতি মণের লোকসান হবে ৪০০-৫০০ টাকা। ১৬০০ টাকার মতো উৎপাদন খরচ হলেও বিক্রি করছি ১২০০ টাকা মণ করে।”

আক্ষেপ নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এবার ঈদে ছেলে-মেয়ে পরিবার ও নিজের কোনো কেনাকাটা করতে পারেননি। কামলাদের খরচ যোগাতে পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে এসেছি।”

তিনি সরকারের কাছে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়ার দাবি জানান।

ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের নয়ার চর এলাকার ফারুক মিয়া বলেন, “৩৬ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ঈদের আগে বিক্রি করে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করার পরিকল্পনা ছিল। তবে আশায় গুড়ে বালি। এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে যে টাকা একজনের কিছুই হবে না।”

ওই উপজেলার নয়ারচর এলাকার মাসুদ মিয়া বলেন, “পেঁয়াজ চাষিদের এবার ঈদ নেই। দুই হাজার টাকার নিচে পেঁয়াজের মণ হলে কিছুই থাকবে না। কিন্তু কৃষকদের ৯০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। উপদেষ্টারা যেন চাষিদের দিকে নজর দেন।”

এছাড়া বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধেরও দাবি জানান তিনি।

শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চুন্নু মিয়া বলেন, “কিসের ঈদের কেনাকাটা, পেঁয়াজ চাষের খরচ পাইতেছি না। দাম এতো কম হলে কৃষক বাঁচবো না।”

এদিকে ঝিটকা বাজার পেঁয়াজ আড়তদাররা জানান, আড়তে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টন পেঁয়াজ কেনা হয়। যা ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ পাঠানো হয়।

তবে পেঁয়াজ চাষে খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় এবার পেঁয়াজ চাষিরা অনেক বেশি লোকসানে রয়েছেন।

ঝিটকা বাজার মোল্লা অ্যান্ড সন্সের কর্ণধার আড়তদার ছবেদ মোল্লা বলেন, “আড়ত থেকে ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ পাঠায়। এবার পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত। উৎপাদন খরচ থেকে ৪০০-৫০০ টাকা লোকসানে কৃষকেরা।”

আরেক আড়তদার পিন্টু গাজী বলেন, “আড়তে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টন পেঁয়াজ কেনা হয়। শিবালয়, ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা এ আড়তে পেঁয়াজ, মরিচসহ সবজি নিয়ে আসেন।”

হরিরামপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, “উপজেলায় পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৮৩০ হেক্টর। তবে রোপণ করা হয়েছে তিন হাজার ৩০০ হেক্টরের মত। এবার চাষের খরচ বিশেষ করে মজুরি ও বীজের দাম বেশি ছিল। এখন আবার দাম কম।”

তবে হালি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। দাম বাড়লে পরে বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ উঠবে বা কিছু লাভ হবে বলে আশা এই কৃষি কর্মকর্তার। সূত্র: বিডি নিউজ

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।

 

সর্বশেষ