গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার হাটবাজারে এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম নেমেছে অর্ধেকে। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষক। অপরদিকে লাভ গুনছেন পাইকার। তবে কম দামে আলু পেয়ে খুশি ভোক্তা।
কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আগাম আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষক হতাশ। অনেকে উৎপাদন খরচ না ওঠার শঙ্কায় রয়েছেন। এমন হলে আগামী মৌসুমে আগাম আলুর চাষ কমে যাবে।
সাদুল্লাপুর বাজারের পাইকার মাহবুবুর রহমান জানান, গতকাল বুধবার প্রতি পাল্লা (স্থানীয়ভাবে ৫ কেজিতে এক পাল্লা) আলু বিক্রি করেছেন ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তাতে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ২৩ থেকে ২৪ টাকায়। তিনি খুচরা পাইকারের মাধ্যমে আলু সংগ্রহ করেছেন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা পাল্লা। আবার খুচরা পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে কিনছেন ৯৫ থেকে ১০০ টাকা পাল্লা। এভাবে হাতবদল হয়ে বাজারে আসছে আলু। প্রত্যন্ত গ্রামের হাটবাজারে আলুর দাম আরও কম।
ক্রেতা জামির হোসেন বলেন, এক মাস আগে আলু কিনেছেন প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। এখন নতুন আলু পাচ্ছেন ২৪ থেকে ২৫ টাকায়।
তীলকপাড়া গ্রামের কৃষক আজাদুল ইসলাম বলেন, আগাম চাষের জন্য প্রতিকেজি আলুর বীজ কিনতে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। কিন্তু নতুন আলু বিক্রি করে উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না। মাসের ব্যবধানে দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে। এমন বাজারমূল্য অব্যাহত থাকলে লোকসান গুনতে হবে।
ধাপেরহাট এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, লোকসান যাতে কম হয়, সেজন্য ক্ষেতের আলু দ্রুত তুলে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এতে হাটবাজারে নতুন আলুর আমদানি বেড়েছে। কমেছে দাম। লাল পাকড়ি, কার্ডিনাল, সাদা হল্যান্ড ও বার্মা জাতের নতুন আলু সাদুল্লাপুরের হাটবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আগাম উৎপাদিত এসব আলু কৃষকরা ২০ টাকা কেজির কমে বিক্রি করলে লোকসান হবে বলে জানান উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া।
তিনি বলেন, আগাম রোপণের কারণে বেশি দামে বীজ আলু কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে সার-কীটনাশক, সেচ ও দিনমজুর খরচ মেলালে এলাকাভেদে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৮ থেকে ১৯ টাকা। কিন্তু দাম যেভাবে কমেছে, তাতে উৎপাদন খরচ তোলাই দায়।
এদিকে ধাপেরহাট বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষক নজরুল মিয়া বলেন, প্রতিমণ আলুর জন্য খাজনা (হাটের টোল) দিতে হয় ৩০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ এবং বাজারে নিজের হাত খরচ ধরলে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ থেকে ২১ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু পাইকাররা আলুর দাম বলেন ২০ টাকার কম।
জানা গেছে, ধাপেরহাট বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে খাজনা নেওয়া হয়। এতে প্রতি মণ আলু কেনাবেচায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা টোল নেন আদায়কারী। অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে ধাপেরহাট বাজারের আলুর গলির টোল আদায়কারী সোলায়মান আলী মন্তব্য করতে চাননি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ‘হাটবাজারের টোল নির্ধারণ’ তালিকায় বলা আছে, প্রতি মণ আলুর জন্য ইজারাদার টোল নেবেন ১০ টাকা। আবার এক মণের কম আলু বিক্রি হলে টোল নেবেন ৮ টাকা। টোল দেবেন শুধু বিক্রেতা। কিন্তু ওই তালিকা অমান্য করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে টোল বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, উপযুক্ত দাম না পেলে কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এ জন্য সবজি হিমাগার স্থাপনসহ উৎপাদিত সবজি রপ্তানির উদ্যোগ নিলে তারা উপকৃত হবেন।