ঢাকা   সোমবার
১০ মার্চ ২০২৫
২৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ রমজান ১৪৪৬

কৃষির নতুন প্রযুক্তি: একসঙ্গে ২১ জাতের আলু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন হাবিবুরের খেতে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৭ মে ২০২৪

আপডেট: ১১:৩৬, ৭ মে ২০২৪

কৃষির নতুন প্রযুক্তি: একসঙ্গে ২১ জাতের আলু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন হাবিবুরের খেতে

কৃষির নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জাতের ফসল চাষের জন্য বেশ পরিচিতি রয়েছে হাবিবুর রহমান জালালের। একসময় জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। দেশে ফিরে একজন পুরোদস্তুর কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর গ্রামের এই কৃষি উদ্যোক্তা। একসঙ্গে ২১ জাতের আলু চাষ করে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান জালালের কৃষি খামারে গিয়ে দেখা যায়, টিনবাঁশের একটি ঘরে বিভিন্ন রঙ ও আকারের আলু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। জমি থেকে আনা আলুর কোনোটি গোল, লম্বাটে, কোনোটি লালচে ও হলদেটে রঙের। সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতিটি জাতের আলাদা নাম লেখা রয়েছে।

জালাল জানান, জমির সব আলু সংগ্রহ করা হয়েছে। এ আলু এখন শুধু বিক্রি কিংবা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে না। প্রথমেই বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। বীজ বাছাই শেষে যা থাকবে সেগুলো বিক্রি করা হবে। লাভ-ক্ষতির অংক না কষে তিনি নতুন জাতের ফসলের চাষাবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন জাতের দেশী-বিদেশী ধান চাষ করে আসছেন। বিভিন্ন জাতের মধ্যে ছিল রঙিন ধান। কৃষির নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জাতের প্রতি আগ্রহ তার। গত বছর ১২ জাতের আলু চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষের। এ বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও মৌলভীবাজারের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায় প্রায় ১৫০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেন। নতুন-পুরনো মিলিয়ে তিনি এ বছর ২১ জাতের আলু চাষ করেছেন।

মৌসুমের শুরুতে খারাপ আবহাওয়ায় কারণে এক মাস পিছিয়ে আলু রোপণ করতে হয় ডিসেম্বরের শেষ দিকে। বিলম্বে ফসল রোপণ ও বছরের শুরুতে বৃষ্টিপাত মোকাবেলা করেও তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। ২১ জাতের আলুর মধ্যে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ১৮টি জাত। এর মধ্যে বারি-২৫ (অ্যাসটেরিক্স), ৪০, ৪১, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫৩ (এলবি-৬), ৬২, ৬৩, ৭৭ (সার্পো মিরা), ৭৮, ৭৯, ৮৭, ৮৮, ৯০ (এলোয়েট) ও ৯১ (ক্যারোলাস)। এছাড়া পুরনো আরো তিন জাতের আলুর বীজ ছিল। এর মধ্যে বারি-৭৮ ও ৪৭ সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে।

হাবিবুর রহমান জালাল বলেন, ‘জমিতে বীজ রোপণের পর সার দেয়াসহ নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। এসব জাতের আলু গাছে রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে অনেক গাছ মরে যায়। আলু যতটা বড় হওয়ার কথা তা হয়নি। তার পরও ফলন ভালো হয়েছে। ১ শতাংশ জমিতে দেশী জাতের আলু খুব ভালো উৎপাদন হলেও সর্বোচ্চ ২০-২৫ কেজি হয়। কিন্তু নতুন জাতের এ আলু ১৬০-১৭০ কেজি উৎপাদন হয়েছে। তবে এবার খারাপ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির কারণে মড়ক ও পোকার উপদ্রব ছিল। ফলে ছত্রাকনাশক ঘন ঘন ব্যবহার করতে হয়েছে। প্রতি শতক জমিতে ২ হাজার ৫০০ টাকার মতো খরচ হয়। তবে টাকার হিসাবে লাভের অংক প্রায় দ্বিগুণ।’

মৌলভীবাজারের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল মাজেদ মিয়া বলেন, ‘গতবার হাবিবুর রহমান জালালকে ১০ জাতের বীজ দেয়া হয়েছিল। ভালো ফলন হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে তিনি নিজেই বীজ দিয়েছেন। এবার তাকে ১৮ জাতের বীজ দেয়া হয়েছে। কৃষক তো সবটা করেন না, যেটা বেশি উৎপাদন হয়, তারা সেটাই আবাদ করেন।’