ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লিচু মৌসুমে শত কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৮ এপ্রিল ২০২৪

লিচু মৌসুমে শত কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে এখন ম-ম গন্ধ। আর লিচু মুকুল থেকে সুস্বাদু, মিষ্টি মধু মৌমাছির মাধ্যমে আহরণ করছেন শত শত মৌ-খামারি। এতে বাগানিরা, মৌচাষি উভয় লাভবান হচ্ছেন। 

দিনাজপুরে এবার সহস্রাধিক মৌ-খামারি লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছেন। এবার দিনাজপুরের লিচুর মুকুল থেকে বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এসব মৌ-খামারি। প্রচুর ফুল থাকায় মধু উৎপাদন রেকর্ড ছুঁতে পারে। উৎপাদিত মধু দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৫৪১৮টি। সূত্র জানায়, দিনাজপুরে বর্তমানে প্রায় ১১০০ মৌ-খামারি লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছে। সদর উপজেলার মাশিমপুর, কিষাণ বাজার, শেখপুরা, উলিপুর, পাঁচবাড়ী, বিরলের মাধবাটি, ঝুকুরঝাড়ি, কাশিডাঙ্গা, খানসামার সনকা, কাঁচিনিয়া, বীরগঞ্জের গোপালগঞ্জ, চিরিরবন্দরের মাদারগঞ্জ, পার্বতীপুরের আমবাড়ি, ফুলবাড়ি উপজেলাসহ লিচু বাগানগুলোতে চলছে মধু উৎপাদনের উৎসব। এ বছর গাছে প্রচুর লিচু মুকুল থাকায় দিনাজপুরে খামার স্থাপনের সংখ্যা বেড়েছে। 

সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খামারিরা প্রায় ৯ হাজার মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ১৫-২০ কেজি লিচু মধু উৎপাদন সম্ভব। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন মধু দিনাজপুরে উৎপাদন হতে পারে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। 

লিচু মধু পাইকারি বাজারে প্রতি মণ সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ লিচু মধুর বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সুঘ্রাণ, আকর্ষণীয় রং আর অতুলনীয় স্বাদ বিদ্যমান থাকায় দিনাজপুরের লিচু মধুর আলাদা কদর দেশজুড়ে। বর্তমানে দেশের বাইরেও কদর বাড়ছে লিচু মধুর। 

মৌচাষি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দিনাজপুর জেলায় যে পরিমাণ লিচু বাগান আছে, এটা যদি সুশৃঙ্খল অবস্থায় গাণিতিক আকারে পরিচালনা এবং মৌ-খামারিদের সেভাবে বিন্যস্ত করা যায় তাহলে দিনাজপুর থেকে হাজার কোটি টাকার মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ থেকে দিনাজপুরে লিচু মধু উৎপাদনে আসা মৌচাষি শিশির সাহা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসময়ের বৃষ্টির জন্য বেশির ভাগ মৌ-খামারই এবার দিনাজপুরে এসেছে। দিনাজপুরে মৌবাক্সে মধু উৎপাদন সন্তোষজনক। আবহাওয়া, ঝড়, বৃষ্টির বা প্রখর রোদে না পড়লে ব্যাপক ফুল থাকায় মধু উৎপাদন রেকর্ড ছুঁতে পারে। মৌচাষিরা এখন লিচু বাগানে বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন। 

দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প (বিসিক)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, লিচু বাগানে মৌচাষ করে মৌচাষিরা যেমন লাভবান হন, মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ণ ঘটায় লিচুর ফলনও ২৫ ভাগ বেশি হয়। এতে বাগানিরা ও মৌচাষি উভয় লাভবান হবেন। এতে বেকারত্ব যেমন দূর হচ্ছে, তেমনি লিচুর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।