রংপুরে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল আলুর দাম। মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার এক পর্যায়ে সরকার পণ্যটির দাম নির্ধারণ ও আমদানির অনুমতি দেয়। সেটাও কাজে আসেনি। যার প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। দাম বেশি থাকায় লাভের আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই খেত থেকে আলু তুলে ফেলেছেন অনেক কৃষক। এতে পণ্যটির মোট উৎপাদন কমেছে। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন। অর্থাৎ ১ দশমিক ৫০ টন উৎপাদন কমেছে।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫৯৫ হেক্টর বেশি। আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে আলুর দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৫ টাকা। চলতি বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়। যদিও রংপুর শহরে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ছিল ৪০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর আলুর আবাদ বেড়েছে ঠিকই। তবে মৌসুমের শুরুতে দাম ছিল অস্বাভাবিক। এর কারণ গত বছর আলুর চাহিদা ছিল বেশি। সে অনুযায়ী জোগান ছিল না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাড়তি পরিবহন খরচ ও হিমাগার ভাড়া। ফলে গত বছরই আলুর দাম বাড়ে। এ সুযোগে এবার মৌসুম শুরুর আগে কৃষক দাম বেশি পাওয়ার আশায় জমি থেকে অপরিপক্ব আলু উত্তোলন করেছেন। এতে ফসলের আকার এবং ওজন কম হয়েছে। ১৫ দোন (২৪ শতকে ১ দোন) জমির আলু দিয়ে এক ট্রাক (১৪ টন) ভর্তি হচ্ছে না। অথচ গত বছর পাঁচ দোন জমির আলু দিয়ে এক ট্রাক ভর্তি হতো।
এর প্রভাব পড়েছে রফতানি বাণিজ্যেও। রংপুর থেকে গত বছর প্রায় ১১ হাজার ৮০০ টন আলু রফতানি হয়েছিল। এ বছর রফতানি হয়েছে ১৪২ টন। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি টন আলু রফতানি করতে হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ ডলারে। যেখানে পাকিস্তান প্রতি টন আলু রফতানি করে ২৩০-২৫০ ডলারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের নব্দীগঞ্জ, মীরবাগ, কাউনিয়া, পাওটানা, হুলাসু, দেওতি, বড়দরগা, রঘু, মীরগঞ্জ, মাহিগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, দমদমা, ঠাকুরবাড়ী, মিঠাপুকুর এবং বৈরীগঞ্জে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। শতাধিক ব্যবসায়ী এখানকার কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে কমিশনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে প্রতিদিনি ২০-২৫ ট্রাক আলু শিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। এসব আলু সাধারণত শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সংযুক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, দেরিতে শীত আসা এবং কম সময়ে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় আলুর টিউবারের সংখ্যা কম ও আকারে ছোট। এ কারণে আলু আবাদের জমি বাড়লেও ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ৫২ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন।