ঢাকা   সোমবার
৩১ মার্চ ২০২৫
১৬ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষে বিপ্লব, শত কোটি টাকা বাজারজাতের আশা কৃষকদের

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৭ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১০:৪৭, ২৭ মার্চ ২০২৫

মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষে বিপ্লব, শত কোটি টাকা বাজারজাতের আশা কৃষকদের

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এবার প্রায় ৪০ হাজার টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শত কোটি টাকা তরমুজ বাজারজাত করা যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। বিগত তিন বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া, মায়ানী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ২০০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। ২০২৪ সালে আবাদ হয়েছিল ৪৭৫ একর জমিতে। ২০২৩ সালে চাষ হয় ১৭৫ একর জমিতে। ২০২২ সালে আবাদ হয় ১৪৫ একর জমিতে। এবার তরমুজের বাজারজাত পুরোদমে শুরু হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রথম এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ১৪৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু হয়। নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার সিরাজুল ইসলাম ইছাখালীতে প্রথম তরমুজ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হওয়ায় পরের বছর তাকে অনুসরণ করে আরো বেশ কয়েকজন চাষি তরমুজ চাষ করেন। এরপর এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় চার ইউনিয়নে তরমুজ চাষ ছড়িয়ে পড়ে। এখানে তরমুজ চাষ করা সব কৃষক নোয়াখালী জেলার। এবার প্রায় ১০০ কৃষক তরমুজ আবাদ করেছেন এখানে। এসব তরমুজ ক্ষেতে কাজ করার জন্য প্রায় দুই হাজার শ্রমিক রয়েছে।

সরজমিন দেখা গেছে, দু’চোখের দৃষ্টি যতটুকু যায় শুধু সবুজ তরমুজ ক্ষেত। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজের সবুজ ক্ষেত। এখানে সেখানে একেকটি তরমুজ পিঠ উঁচু করে আছে। দেখে মনে হবে মাটির মধ্যে তরমুজ যেন বসিয়ে রাখা হয়েছে। মাঠের মধ্যে ছিটে ফোটা একেকজন কৃষককে দেখা যাচ্ছে মাঠে কাজ করছেন।

তরমুজ চাষিরা জানান, এখানে যারা তরমুজ চাষ করছেন তারা সবাই নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরের বাসিন্দা। আগে সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ হলেও একই জমিতে বারবার তরমুজ চাষ করায় সেসব জমি চাষের উপযোগিতা হারিয়েছে। মিরসরাই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষিরা এখানে এসে এখন তরমুজের আবাদ করছেন।

কথা হয় তরমুজ চাষি আবু জাফরের সাথে। তিনি বলেন, এবার আমি প্রায় ৬০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো বিক্রি করতে পারব। আট একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন বেলাল হোসেন। আরেক চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা পাঁচজন মিলে ৩৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো। দু-এক দিন পর বিক্রি শুরু করবো। সবকিছু ঠিক থাকলে এক কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া আবদুল কাদের মাঝি, মানিক, সুজা মাঝিসহ আরো কয়েকজন তরমুজ চাষির সাথে কথা হয়। তারা জানান, চাষাবাদ ও বাজারজাতকরণে সুবিধা থাকায় এবং এই অঞ্চলের মাটি দোআঁশ মাটি থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হয়। আকারে বড় এবং খেতে বেশ সুস্বাদু এ অঞ্চলের তরমুজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া, মায়ানী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জায়গা খালি পড়ে থাকত। দোআঁশ মাটি ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় ২০২২ সালে সিরাজ নামে একজন তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তিনি মাটি সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করেন। মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের থেকে তিন মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকায় বর্গা নেন তিনি। সেই জমিতে তিনি তরমুজের বীজ বপন করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় ক্রমান্বয়ে চাষের পরিধি বাড়ছে। এবার এক হাজার ২০০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। আগামী বছর হয়তো আবাদের পরিমাণ আরো বাড়বে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও অন্যান্য রবিশস্য থেকে এটাতে তিন গুণ বেশি লাভ হয়। আবহাওয়া এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন তরমুজ উৎপাদন হবে এ চরাঞ্চলে। যার বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।