
সোনালী দানা ভুট্টা চাষ করে অবহেলিত বঞ্চিত চরের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন।
জেলার তিস্তা নদীর বাম তীরের ৬৭ কি.মি. জুড়ে শুষ্ক মৌসুমী জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে দামী সোনালী দানা ভুট্টা।
জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে নদীবেষ্টিত চার উপজেলায় তিস্তা নদীর চরে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হচ্ছে এ ভুট্টা ।
এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে এ বছর ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নের কিছু অংশ তিস্তা নদী বিধ্বস্ত। এ ৩টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চাষীরা জমিতে বিভিন্ন প্রকার ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে একমাত্র অবলম্বন নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে ভুট্টার আবাদ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষ বেশি লাভবান হওয়ায় চরের কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষ করছেন বেশি।
৩৩ শতাংশের চরের এক বিঘা জমিতে ভুট্টার ফলন হয় ৪০ থেকে ৪২ মণ, উৎপাদন খরচ ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। ভুট্টার বর্তমান বাজার দর ১২৫০-১৩৫০ টাকা। অন্য ফসলের থেকে ভুট্টায় দ্বিগুণের বেশি লাভ হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভুট্টার চাষ করছেন চরের কৃষকেরা।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর, ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী ও তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সির বাজার চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ বছর বন্যার কারনে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হলেও ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। বন্যার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের জমি বেশি উর্বর হওয়ায় ভুট্টার ফলন ভালো হয় বলে জানান চাষীরা। ভুট্টাকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।
উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন শৌলমারী এলাকার ভুুূট্টাচাষী আব্দুল খালেক জানায়, এবারে তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ভুট্টা উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ভুট্টার ফলন যেভাবে হয়েছে তাতে তিনি প্রায় ২৫০’ থেকে ৩’শ মণ ভুট্টার আশা করছেন। বাজারদর ভালো থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষী। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বীজ, সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হাতের লাগালে থাকলে দ্বিগুণ লাভ হতো বলে জানান তিনি।
চর ভোটমারী এলাকার ভুট্টা চাষী শরিফুল ইসলাম ৩ একর জমিতে ভূট্টা চাষাবাদ করেছেন তিনি বলেন, ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ভুট্টার ভালো ফলনে তার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে অনেক লাভের আশা করছেন এ চাষী।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ভোটমারী ব্লক) মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চরাঞ্চলের ভুূট্টা চাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার ভোটমারী ইউনিয়নে ১৯৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ প্রণোদনার ভুট্টার বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে এবং পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে ভুূট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে ভুট্টা চাষীরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। ভুূট্টা চাষে চরের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কৃষকরা এর সঠিক বাজার মূল্যে পেলে চরের অর্থনীতি আরও সচল হবে।
এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।