
লিচু বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি। তিনি প্রথমবারের মত প্রায় এক একর লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সফল হয়েছেন। তার উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও সাফল্য দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য চাষিরাও।
বোচাগঞ্জ উপজেলার নেহালগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি (৪০) একই উপজেলার আটগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীনের পুত্র। তিনি নিজে নিজেই পরীক্ষামূলকভাবে লিচু বাগানের নিচের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমবারেই সফল হন।
হুমায়ুন কবির জানান, তিনি প্রথম দিনাজপুর থেকে এক হাজার দু'শতটি উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিনে এনে বাসায় চারা তৈরি করেন। নিজের তৈরি করা চারা এক একর ২০ শতক জমির লিচু বাগানে রোপণ করেন।
জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করে প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া গাছে ১০টির বেশি কুমড়ার অংকুর দেখতে পান। কিন্তু তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ৫ থেকে ৬টি কুমড়া সংগ্রহ করছেন। এতে অর্জিত ফসলের আকার বড় হয়েছে এবং মিষ্টি কুমড়ার গাছ বালাই মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
দিনাজপুর জেলায় আম ও লিচু বাগানের সংখ্যা অনেক। প্রতিটি বাগানে গাছের নিচে হাজার হাজার একর জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। সেই বাগানে গাছের নিচের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করলে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা।
জনি বলেন, ‘আমি লিচু বাগানে তিন জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। এই কুমড়া আবাদ করতে আমার প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছি। এখন আরো অনেক মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ আশা করছি, এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ৫ লক্ষ টাকা আয় হবে।’
লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষের এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনি বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগের স্কুল শিক্ষক। এই পদ্ধতি নিজেই চিন্তা করে প্রয়োগ করেছি। কারণ লিচু বাগানের নিচের পতিত জমিটি সাধারণত পড়ে থাকে। তাই আমি প্রথমবার সেই পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি।’
সরেজমিনে হুমায়ুন কবিরের মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে গিয়ে দেখা হয় একই এলাকার কৃষক আব্দুর রহিমের সাথে। আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, ‘আমি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়।
তাই পদ্ধতি দেখতে এসেছি। লিচু বাগানের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষ দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি আগামী বছর আমার আম বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করব।’
বোচাগঞ্জ উপজেলার কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, হুমায়ুন কবীরের সাফল্য দেখে জেলার অনেক লিচু ও আম বাগানের মালিক কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন। ওই সব বাগান মালিকদের লিচু গাছের নিচের জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব বাগানে উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করলে সাফল্যের হার বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, জেলার হাজার হাজার একর লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদিত হলে জেলার চাহিদা পূরণ করে তা দেশের অন্যান্য জেলাতেও সবজির চাহিদা পূরণ করতে পারবে।’
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার শাহা বলেন, ‘ কৃষি শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি নিজ উদ্যোগে এক একর জমিতে প্রথমবারের মতো লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে সফল হয়েছেন । আশা করছি, এ পদ্ধতিতে চাষ করে ভালো ফলনে কৃষক লাভবান হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তাকে কারিগরি পরামর্শ প্রদান করছি। আমি হুমায়ুন কবির জনির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, সম্প্রতি জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ পরিদর্শন করেছি। এটি একটি সফল উদ্যোগ। এই জেলার ১৩ টি উপজেলার লিচু ও আম বাগানে গাছের মাঝখানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়াসহ সাথী ফসল চাষে বাগান মালিকদের উৎসাহ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘লিচু ও আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষে সাফল্য অর্জিত হলে তা জেলার কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’
এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।