ঢাকা   শনিবার
১৫ মার্চ ২০২৫
৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৫ রমজান ১৪৪৬

টমেটো চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে হাবিপ্রবি’র কৃষি অনুষদের গবেষণা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৫ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ০৮:৩১, ১৫ মার্চ ২০২৫

টমেটো চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে হাবিপ্রবি’র কৃষি অনুষদের গবেষণা

টমেটো চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে জেলার হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)'র কৃষি অনুষদের একটি গবেষণা। এই গবেষণায় দেখা গেছে হাবিপ্রবি’র উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহার করে রোগমুক্ত টমেটো গাছ ও অধিক ফলন সম্ভব। 

হাবিপ্রবি’র প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মহিদুল হাসান ও পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হলে বিষয়টি জানা যায়। গবেষণায় জানা যায়, তাদের উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহারের ফলে রোগমুক্ত টমেটোর গাছে গতানুগতিক চাষ পদ্ধতির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি টমেটো উৎপাদিত হয়েছে।

হাবিপ্রবি'র প্লান্ট-প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ মুহিদুল হাসান বলেন, টমেটো নিয়ে গবেষণায় মাঠে ৬ টি ট্রিটমেন্টের মধ্যে দেখা গেছে, ট্রাইকোডার্মা বায়োফান-জাইসাইড প্রয়োগকৃত ট্রিটমেন্টে গাছের শাখা, কাণ্ড, মূলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও উচ্চতা বেশি ছিল। টমেটো গাছের স্বাস্থ্যও ছিল অনেক ভালো। অন্য ৪ টি ট্রিটমেন্টের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি ফলন হয়েছে। 

গাছ গণনা করে দেখা যায়, প্রতি গাছে ৯০টি করে টমেটো ধরেছে। গবেষণার জন্য গবেষকেরা ৬টি ট্রিটমেন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বীজ এবং মাটি শোধন করে নেন। পৃথকভাবে শোধন করা মাটিতে পৃথকভাবে শোধিত বীজ বপন করেন। তারপর ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী তারা, সার, বিষ, রোগ এবং ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করেন। ট্রাইকোডার্মা উদ্ভাবনের জন্য বিভিন্ন রকমের মাটি সংগ্রহ করে গবেষণাগারে আইসোলেশন করেন। তারপর তারা ১৮ রকমের ট্রাইকোডার্মা পেয়ে থাকেন। মলিকুলার টেস্টের মাধ্যমে ১৮টি ট্রাইকোডার্মার নাম শনাক্ত করেন। রোগ প্রয়োগের মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতির জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের মাটিবাহী ক্ষতিকর রোগ সংগ্রহ করে গবেষণাগারে আইসোলেশন করেন। মলিকুলার টেস্টের মাধ্যমে রোগগুলোর নাম শনাক্ত করেন। ল্যাবে উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মা দিয়ে মাটিবাহী রোগ দমন হয় কি না তার টেস্ট করা হয়। টেস্টে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা শুরু হয়।

টমেটোতে ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড প্রয়োগের গবেষণা শুরু হয় গত ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। গবেষণা শুরু হয়ে এ যাবত তিন মৌসুম ট্রায়াল হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিকভাবে চাষাবাদের মাধ্যমে রোগমুক্ত টমেটো গাছে উচ্চ ফলন ফলানো। যাতে কৃষকরা কম খরচে প্রাকৃতিক এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে বেশি পরিমাণ টমেটো উৎপাদন করতে পারেন। কারণ ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহার করে টমেটো চাষ করলে গাছ রোগমুক্ত থাকে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। 

ড. মুহিদুল হাসান জানান, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে আবহাওয়া, মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীকুলের কোনো ক্ষতি সাধন হয় না। এ পদ্ধতিতে গতানুগতিক চাষাবাদ পদ্ধতির চেয়ে খরচও অনেক কম। যা দেশের কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 

গবেষণার বিষয় নিয়ে হাবিপ্রবি'র প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে প্রচলিত কীটনাশক এবং ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করেও তারা (কৃষকের ভাষায়) স্ট্রোক রোগ এবং কুয়াশাজনিত রোগ থেকে টমেটোর গাছকে রক্ষা করতে পারেন না। তাই কৃষকদের এমন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য আমার সুপারভাইজার প্রফেসর ড. মো. মহিদুল হাসান স্যার ও আমি ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড উদ্ভাবনের কাজ শুরু করি। আমরা আশা করছি, আমাদের উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মা কৃষকদের রোগমুক্ত এবং উচ্চ ফলনশীল টমেটো এবং অন্যান্য ফসল ফলাতে সাহায্য করবে।

এ প্রসঙ্গে ড.মুহিদুল হাসান বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা জৈবিক উপায়ে ফসলের রোগ দমন করতে পারবেন। বিশেষ করে টমেটোর ঢলে পড়া রোগ (কৃষকের ভাষায় টমেটোর স্ট্রোক রোগ) দমন করতে পারবেন। পাশাপাশি গাছের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করবে, গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি, গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। প্রতি গাছে গণনা করে দেখা গেছে প্রায় ৯০টি করে টমেটো ধরেছে। পক্ষান্তরে, যে গাছগুলোতে আমাদের উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফানজাইসাইড প্রয়োগ করা হয়নি। সেসব গাছে ৪০-৪৫টি টমেটো ধরেছে। যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। আমরা পরপর তিন মৌসুম ট্রায়ালে একই রকম ফলাফল পেয়েছি। 

টমেটো গাছগুলো থেকে উৎপাদিত টমেটোগুলোর পুষ্টিগুণও বেশ ভালো। বিশেষ করে লাইকোপিন এবং এসকরবিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। সেইসঙ্গে বাসায় সংরক্ষণের সময় প্রায় ৪-৫ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি, আর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে সুন্দর নাম নির্ধারণ করে আমরা আমাদের উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফানজাইসাইড বাজারজাত করতে পারব। যাতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা এই ট্রাইকোডার্মার বায়োফানজাইসাইড ব্যবহার করে রোগমুক্ত গাছে উচ্চ ফলন ফলাতে পারেন এবং দেশের কৃষি খাতে অবদান রাখতে পারেন।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।