ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৩ মার্চ ২০২৫
২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

শুষ্ক জমি ফেটে চৌচির-ঝলসে যাচ্ছে ফসল

সেচ সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ফসলহানির আশঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৩ মার্চ ২০২৫

সেচ সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ফসলহানির আশঙ্কা

তীব্র সেচ সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ফসলহানির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বোরোর ক্ষেত্রে। কৃষকরা বলছেন, জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠেই ঝলসে যাচ্ছে কচি ধানের সবুজপাতা। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে আছে সেচের পানির জোগান দেওয়া উৎসগুলো। হাওরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে কৃত্রিম সেচ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বৃষ্টি বিলম্বিত হলে কপাল পুড়বে কৃষকের। খাদ্য সংকটের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশি জাতের ধান চাষাবাদে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে হাইব্রিড প্রজাতির উচ্চফলশীল ধান চাষের ক্ষেত্রে উৎপাদনের সাফল্য নির্ভরই করে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার ওপর। হাইব্রিড ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয় বলেই সেচের ব্যাপারে কৃষক সচেতন থাকতে হয় বেশি।

হাওরের জলাশয়গুলোতে প্রাণ ফেরে বৃষ্টির পানিতে। সেই পানিই বিভিন্ন জলাধার থেকে ফসলের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করেন স্থানীয় চাষিরা।

অনাবৃষ্টির কারণে এরই মধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালির, আঙ্গারুলি, সমসা, বর্ধিত গুরমা, জিনারিয়া, পানা, বলদা, বনুয়া হাওরসহ উপজেলার ২৩টি ছোটবড় হাওরের প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান উৎপাদন।

স্থানীয় এসব হাওরের ফসলি জমি ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হাওরে সেচ দেওয়ার কৃত্রিম ব্যবস্থা বা সে ধরনের সুযোগ নেই। একমাত্র প্রাকৃতিক উৎসই কৃষকদের ভরসা। বিভিন্ন হাওরে নদীতীরবর্তী স্থানে যে সমস্ত জমি রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন চাষিরা। নদী কাছে হওয়ায় কম হলেও নিয়মিত জমির মাটি ভেজাতে পারছেন তারা।

এদিকে সেচ মৌসুমের প্রাক্কালে হাওরবেষ্টিত এই অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলসহ সব ধরনের জলাধার পানিশূন্য থাকায় উদ্বিগ্ন চাষিরা। তারা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি না ঝরলে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। এরইমধ্যে রোপণ করা ধানের গাছ লালচে হয়ে এসেছে।

অপরদিকে উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসল উৎপাদনকারী শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গুরুলি, বর্ধিত গুরমা ও হালির হাওরে কোনো সেচ পাম্প নেই। সেখানকার কৃষকদের ভাষ্য মতে, পানির স্তর অনেক নিচে হওয়ায় সেচ পাম্প স্থাপনে যে টাকা ব্যয় হয় তা বহন করার সামর্থ্য কৃষকদের নেই; যার কারণে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

গোবিন্দশ্রী গ্রামের সেলিম আখঞ্জি বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেছেন। তাঁর জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি পাম্প বসিয়েছিলেন। তিন বছর ধরে সেচ পাম্পটি কোনো কাজে আসছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে; যার কারণে এই পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

এ সমস্যার ব্যাপারে আলাপকালে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, পানির স্তর অতিরিক্ত নিচে থাকায় পাম্প বসালেও সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা নেই। সময় মতো বৃষ্টি না হলে হাওর অধ্যুষিত এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদনে ভাটা পড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, সেচ সংকটের কারণে অনেক হাওরেই ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে বিস্তীর্ণ হাওরের বুকজুড়ে ঝলসানো ধানি জমি দেখতে হবে। ব্যাহত হবে ধান উৎপাদন। 

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।