ঢাকা   রোববার
০৯ মার্চ ২০২৫
২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ রমজান ১৪৪৬

চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজে ৫শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ৮ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ০৯:০৪, ৮ মার্চ ২০২৫

চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজে ৫শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

দীর্ঘ সময় ধরে পেঁয়াজ চাষাবাদের সুনাম রয়েছে ফরিদপুর জেলার। পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর জেলা হিসেবে স্থানটি দখল করেছে এখানকার চাষিরা। পাটের পরে ধান ও পেঁয়াজ আবাদে চাষিদের আগ্রহ রয়েছে। কারণ এ জেলার মাটি পাট পেঁয়াজ ও ধান উৎপাদনে উৎকৃষ্ট।

গত এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হচ্ছে ফরিদপুরে। দেশের সরকারি পেঁয়াজ বীজের চাহিদার মোট ৫০% বেশি বীজ সরবরাহ করে ফরিদপুরের চাষিরা। আর এই কৃষি পণ্যটি উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন চাষিরা।

এজন্যই এই বীজকে ‘কালো সোনা’ বলে এ অঞ্চলের মানুষ। সেই বীজ (কালো সোনা) উৎপাদনে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পর করছে এখন চাষিরা। চলতি মৌসুমে অন্তত ৫শ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা কৃষি বিভাগের।

জেলার ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী, সদরপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু, সাদা কদম ফুলের সমারোহ।

সরজমিনে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠজুড়ে পেঁয়াজের সাদা ফুল দেখা মেলে।

এই ক্ষেতগুলোতে এখন কৃষক-কৃষাণীরা পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে ক্ষেতে সাদা কদমে হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন। কোথাও আবার আগাছা পরিষ্কার ও কদম পচা রোধে ঔষধ স্প্রে করছেন।

এ মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো উৎপাদনের পর ফরিদপুরে বাম্পার ফলন হয়েছে পেঁয়াজ বীজ আবাদে।

অম্বিকাপুরের কৃষাণী শাহেদা বেগম জানান, ছোট শিশুর মতো যত্ন করতে হয় এই বীজ উৎপাদনে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবাদ শুরু হয়ে ফলন উঠবে এপ্রিল-মে’তে। এরপর এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে করা হয় আবাদ ও বিক্রি। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করতে আসে শ্রমিকরা। তারা জানায় বীজের ক্ষেতে কাজ করেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা।

পাবনা থেকে ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে কাজ করতে আসা আনোয়ার, আব্দুর রহমান পরামানিক এর মত বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পেঁয়াজ চাষাবাদের কাজে যুক্ত হতে ফরিদপুর অঞ্চলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আসছে।

তারা জানান, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি পেঁয়াজের বীজ ঘরে তোলা পর্যন্ত। ভালো দানা উৎপাদন করতে পারলে মালিকের যেমন লাভ হয়, তেমনি আমাদেরও আর্থিক পরিবর্তন আসে জীবন মানের।

এদিকে মাঠের পর মাঠ বীজের সাদা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছে মাঠগুলোতে। নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে তুলছেন সেলফি। আবার দলবেঁধে এসে করছেন স্যুটিং।

কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের চাহিদার অর্ধেক বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়। এবছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের বীজের চাহিদা সর্বত্র রয়েছে। প্রকার ভেদে এর বাজার মূল্য দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত ওঠে। এই কৃষি পণ্যটির বাজার মূল্য অধিক হওয়ায় ‘কালো সোনা’ বলে অভিহিত করে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। দিন দিন পেঁয়াজ বীজ আবাদের চাষির সংখ্যা বাড়ছে।’

তিনি জানান এবারের আবহাওয়া ভালো থাকায় ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬৪ টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইল