ঢাকা   মঙ্গলবার
২১ জানুয়ারি ২০২৫
৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬

ইস্পাহানির বীজে প্রতারণা, লোকসানে কৃষকরা

agri24.tv

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

ইস্পাহানির বীজে প্রতারণা, লোকসানে কৃষকরা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কৃষকরা ইস্পাহানি কোম্পানির সরবরাহকৃত বীজে প্রতারিত হয়ে এখন চরম লোকসানের মুখে। উচ্চমূল্যে বীজ কিনেও কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় কৃষকদের অনেকেই এখন দেনার বোঝায় জর্জরিত। আশায় বুক বেঁধে ফসল ফলাতে গিয়ে এখন তাদের ভোগান্তির নেই শেষ।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ইস্পাহানির সরবরাহকৃত মুনলাইট ফুলকফির বীজ নিম্নমানের হওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল পরিপক্ক হওয়ার বদলে ফুটে গিয়ে তা পচে যাচ্ছে। ফলে জমির একটি বড় অংশ পড়ে আছে অনাবাদি ।

কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মোহাম্মদ লিটন হাওলাদার বলেন, ইস্পাহানির বীজ কিনতে বেশি দাম দিতে হয়েছে। কিন্তু চাষ শুরু করার পরই বুঝতে পারি, বীজে সমস্যা রয়েছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে কার্তিক মাসের শুরুতে কলাপাড়ার মজিবর রহমানের কাছ থেকে ইস্পাহানির মুনলাইট ফুলকফির বীজ কিনে এই জমিতে করেছিলাম ফুলকফি চাষ। কিন্তু এখন চাষের জমিতে ফসল পরিপক্ক হওয়ার বদলে ফুটে গিয়ে পচে যাচ্ছে ফুলকফি। ফলে বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে কিভাবে দেনা শোধ করবো তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এ ঘটনায় ডিলারের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন।

এই এলাকায় শুধু লিটন হাওলাদারই নয় ইস্পাহানির ডিলার থেকে উচ্চমূল্যে মুনলাইট ফুলকফির বীজ কিনে তা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাননি স্থানীয় কৃষকরা। ফসলের ফলন না হওয়ায় জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কায় কয়েকশ কৃষক।

এ নিয়ে কলাপাড়ার স্থানীয় ডিলার মাষ্টার সীডের মালিক মো.মজিবর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আগেই কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ইস্পাহানি কম্পানিকে জানিয়েছি। কম্পানির এই লটের বীজে কিছু সমস্যা ছিল তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সামনে কৃষকদের ক্রয়কৃত বীজের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে নেবে বলে তাকে জানিয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে কৃষকদের করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

অন্যদিকে ইস্পাহানি এগ্রো বরিশাল বিভাগের এরিয়া ম্যানেজার শেখ গোলাম মোস্তাইনের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো কৃষকদের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে বলেন, কৃষকরা ফুলকফির দাম না পেয়ে কোম্পানির বদনাম করছেন। আর ডিলারের সঙ্গে তাদের বীজে সমস্যা নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। ডিলার নিজেকে বাঁচাতে কোম্পানির নাম দিয়ে নানা রকমের মুখোরচক কথা বলছেন। তবে আমি এখন আপনার কাছ থেকে শুনলাম পরে হেড অফিসকে জানাবো বলে কোন কেটে দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন বলেন, কৃষকদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বীজের মান পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়ার জন্য আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারের প্রনোদনা কর্মসূচির আওতাভূক্ত করে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে ইস্পাহানির মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

সর্বোপরি কৃষিতে প্রতারণা রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবী কলাপাড়ার কৃষকদের। সঙ্গে তাদের এই দুঃখের অবসান কবে হবে, তা এখন দেখার বিষয়। কৃষি উন্নয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতারণার শিকার এসব কৃষককে সুরক্ষার আওতায় আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ