ঢাকা   শনিবার
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৬

তিস্তার চরে আলু চাষে ১২ একর জমি ভাড়া নিয়া মহাবিপদে কৃষক সাইদুর রহমান

agri24.tv

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:১১, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

তিস্তার চরে আলু চাষে ১২ একর জমি ভাড়া নিয়া মহাবিপদে কৃষক সাইদুর রহমান

‘গতবার আলু আবাদ করি ভালো পয়সা পাইছি। সেই আশায় এবার তিস্তার চরে ১২ একর জমি ভাড়া নিয়া আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করে মহাবিপদে পড়ছি। ট্যাকার অভাবে সার ও বীজ জোগাড় (সংগ্রহ) করতে পারছি না। ব্যাংকগুলাও হামাক (আলু চাষিদের) লোন দিবার চায় না। কী যে করি, ভাবি কূলকিনারা পাই না। কোনো উপায় না পায়া চড়া সুদে অর্থ জোগাড় ও আগাম আলু ব্যাপারীর কাছে ব্যাচে ফালাইছি। সরকার লোন দিলে হয়, তাহলে হামাক (আলু চাষি) এত ক্ষতি হইল না হয়।’– বলছিলেন গোড়াই পিয়ার তিস্তাপারের আলু চাষি মো. সাইদুর রহমান।    

উপজেলার কিশোরপুর চরের আলু চাষি মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, সুদে টাকা নিয়ে তিনি নিজের ও অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ১ একর জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অর্থের অভাবে এখনও বীজ ও সার সংগ্রহ করতে পারেননি। তিনি জানান, গত বছর জমির ভাড়া ছিল শতক ১০০ টাকা, এবার জমির ভাড়া ৩০০ টাকা। এ ছাড়া সার, বীজ, হাল চাষ, সেচ ও শ্রমিক মজুরি অনেক বেশি। তাই এবার উৎপাদন খরচ একরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পড়বে। দুর্যোগের কারণে আলুর ফলন কম বা বাজারে উপযুক্ত দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। 

উলিপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ হেক্টর। তার মধ্যে উফশী জাত ৯০০ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ২০০ হেক্টর। গত বছর আলু বেশি দামে বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। তাই এবার চরে ব্যাপক আলু চাষের প্রস্তুতি চলছে। 

তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর অক্টোবর মাসজুড়ে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক আগাম আলুর আবাদ করতে পারেননি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তিস্তা চরের অনেক কৃষক আগাম আলুর চাষ করেছেন। কিন্তু আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করে অর্থ সংকটের কারণে সার ও বীজ কিনতে পারছেন না কৃষক। এদিকে একসঙ্গে সবাই আলু চাষের প্রস্তুতি নেওয়ায় হাল চাষ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। এতে কৃষকরা বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

গোরাই পিয়ার চরে ১০ একর জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেছেন কৃষক মো. আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, চরের জমিতে আলুর ফলন হয় বেশি, আলুর মানও ভালো, দামও পাওয়া যায় বেশি। তবে আলু চাষ অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র কৃষকরা অর্থের অভাবে আলুর চাষ করতে পারেন না। তাই জমি ভাড়া দেন।  আলু চাষের জন্য সরকারি প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ঋণ ও বীজ-সারের ব্যবস্থা করা গেলে চরাঞ্চলগুলোতে আলু চাষের বিপ্লব ঘটবে। 

জানা গেছে, তিস্তার দুই পারের চরের জমিতে আলু চাষের ধুম পড়েছে। তবে শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকরা চরে খড়ের ধাপড়ি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিনরাত জমিতে কাজ করছেন। আলু চাষিদের ভাষ্য, পতিত থাকা চরের জমিতে এখন যেন সোনা ফলছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকলেও আলু আবাদের জমির পরিমাণ বাড়াতে পারছেন না তারা। 

এ বিষয়ে উপজেলার সার ডিলার সমিতির সভাপতি আবুল কালাম মণ্ডল বলেন, এবার সারের ওপর তেমন কোনো চাপ নেই।  ডিলাররা এ মাসের বরাদ্দ পেলে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে।

মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংক উলিপুর শাখার ব্যবস্থাপক পলাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, তারা আই ফার্মা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ দেন। কিন্তু গতবারের কিছু লোন আদায় না হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন। চলতি বছরও কৃষকদের ঋণ দিতে প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে নুতন করে ঋণ দেওয়া হবে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, এবার চরে প্রচুর আলুর আবাদ হবে। তারা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন।  

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, কৃষকরা যোগাযোগ করলে তিনি আলু চাষিদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। 

সর্বশেষ