নওগাঁয় কৃষি বিপ্লবের নতুন সম্ভাবনায় শুরু হয়েছে কাসাবা চাষ। গ্লুকোজের অন্যতম মূল উপাদান কাসাবা। এ ছাড়া বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে এটি দরকার। এ জন্য বাংলাদেশকে এসব উপাদান এখন বহুলাংশেই আমদানি করতে হয়। সে কারণে খাদ্যের চাইতে শিল্পের জন্য বাংলাদেশে কাসাবার ভবিষ্যৎ ভালো। বাংলাদেশে এর চাহিদা বেশি হলেও উৎপাদন হয় অনেক কম। তাই এ জেলায় প্রথমবার চাষ হয়েছে কাসাবার।
জানা গেছে, কাসাবা মূলত আফ্রিকায় চাষ হয়ে থাকে। এটি ওই অঞ্চলের আলুজাতীয় ফসল; যা পৃথিবীর প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাসাবা বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। গ্রামের মানুষ কাসাবাকে শিমুল আলু বলে থাকে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে। রোগবালই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এই ফসল সহজেই অনুর্বর জমি ও খরাপ্রবণ এলাকায় চাষ করা যায়। এটি একটি খরা সহনশীল ফসল। যেখানে ৬ মাস পর্যন্ত খরা বা শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে সেখানেও কাসাবা সহজে চাষ করা যায়। সাধারণত জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। অধিকাংশ জায়গায় পিট তৈরি করে কাসাবার কাটিং বা সেট লাগানো হয়। পাহাড়ি এলাকায় এটি একটি সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি। তবে পিটগুলো মাটি থেকে একটু ওপরের দিকে উঠানো হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।
প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ হাজার গাছ লাগানো যায়। পত্নীতলার ডোহানগর গ্রামের কৃষক উৎপল কুমার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৫ কাঠা জমিতে কাসাবা চাষ করেছেন। পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় এ বছর প্রথমবার লাগানো হয়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ৫ কাঠা জমি থেকে কাসাবা পাওয়া যাবে ৩০-৪০ মণ। আর খরচ হয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। লাভ হবে ৫০-৭০ হাজার টাকা। বাজারে এর চাহিদা অনেক।
একই গ্রামের কৃষক আবদুস ছালাম বলেন, কাসাবা আমাদের কাছে নতুন হলেও এটি বিশ্বে জনপ্রিয় একটি খাবার। সামছুলের কাসাবা চাষ দেখে এলাকার অনেক চাষি আগ্রহী হয়েছেন। কাসাবা চাষে কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে। অল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কাসাবার চাহিদা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ৫-৬ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবার কাসাবার চাষ হচ্ছে এ জেলায়। চলতি নভেম্বর মাসে রোপণ করা হয়। আগামী বছর নভেম্বর মাসে কাটা হবে। তবে বাজারজাত ভালোভাবে করা গেলে কৃষক আরও উৎসাহী হবেন।