জয়পুরহাটে বীজ আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকায়ও সংগ্রহ করতে পারছেন না কৃষকরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করেও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
কৃষি বিভাগের দাবি, সংকট নয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই আলুবীজের সংকট দেখা দিয়েছে। পুরো জেলায় প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের একাধিক টিম বাজার মনিটরিং করছে। অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ীদের জড়িমানাও করা হয়েছে। এরপরও তাদের থামানো যাচ্ছে না।
জেলায় এবার ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরজন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পক্ষ থেকে চার হাজার মেট্রিক টন বীজ ২১০ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি কম্পানির বীজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ৬ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ ১৪ জন ডিলার ও ৩২০ জন সাব-ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানি চাহিদার ৩৫ শতাংশ উচ্চ ফলনশীল বীজ জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ বীজ আলুর চাহিদা মিটিয়েছে সচেতন কৃষক ও উদ্যোক্তারা। ফলে বাজারে আলুবীজের কোন সংকট থাকার কথা না বলছে কৃষি বিভাগের।
তবে ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এ বছর সরকারি-বেসরকারি প্রতি কেজি ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের উচ্চ ফলনশীল আলু বীজ প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু বাজারে কিনতে গেলে ‘বুকিং বন্ধ’ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে বীজ নাই বলছেন ডিলাররা। একই বীজ ১০০ টাকা কেজিতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। জেলা সদরসহ ক্ষেতলাল, কালাই ও আক্কেলপুর উপজেলার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
ক্ষেতলালের বস্তা গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, এক বিঘা জমিতে রোপনের জন্য চার বস্তা বীজআলুর প্রয়োজন। বাজারে ৩ হাজার ২০০ টাকার বীজ আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। তাও পাওয়া যাচ্ছে না।
শিবপুর বাজারের খুচরা বীজ ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন বলেন, ডিলারদের কারসাজির কারণেই কৃষকরা বেশি দামে আলু বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা চুক্তি করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বীজ সরবরাহ করেন। সেই বীজ প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা লাভ নিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।
চৌমুহনী বাজারের ব্র্যাক সীড কোম্পানির ডিলার শাহজামান তালুকদার বলেন, জেলায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন বীজের চাহিদার বিপরীতে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে মিলছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এ সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু বীজ ব্যবসায়ী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মুজিবর রহমান বলেন, জেলায় আলু বীজের কোন সংকট নেই। উচ্চ ফলনশীল আলুবীজের সর্বোচ্চ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।