ছত্রাকনাশক ব্যবহারে জমির ফুলকপি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ১৪ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ১৩ জন কৃষক এ টাকা পয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিনের উপস্থিতিতে তার কার্যালয় ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট কর্মকর্তারা কৃষকদের মাঝে এ ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেন।
উপজেলার চুনিয়াপাড়া, গগনবাড়িয়া ও সাকোয়া গ্রামের ১৩ জন কৃষক ১৪ লাখ ২১ হাজার ৭০ টাকা ক্ষতিপূরণ পান।
জানা যায়, সম্প্রতি চীন থেকে আনা ‘নিউজিম’ নামে ছত্রাকনাশক ফুলকপিতে ব্যবহারের জন্য কৃষকদের দেন ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের স্থানীয় পরিবেশক। এটি সাধারণত কলায় ব্যবহার করা হয়। ছত্রাকনাশকটি ব্যবহারের পর কৃষকদের ফুলকপিতে পচন ধরে। এ নিয়ে কৃষকরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
কৃষকরা জানান, তাদের ৪৬৯ শতক জমির সব ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ক্ষতিপূরণের দাবিতে সম্প্রতি কৃষকরা ফুলকপির ক্ষেতে মানববন্ধন করেন। ঋণ করে আবাদ করা এক কৃষক কাঁদতে কাঁদতে ক্ষেতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এ অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীনকে মাঠে পাঠান। তিনি গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যক্ষ করেন। কৃষকদের ব্যবহার করা নিউজিমেই ক্ষতি কি না তা পরীক্ষা করতে ভাল থাকা ফুলকপির খেতেও কিছুটা নিউজিম স্প্রে করান কৃষি কর্মকর্তা। পরে দেখা যায়, নতুন করে স্প্রে করা ভাল ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে, কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আগেই বাজার থেকে ওই ছত্রাকনাশক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট। তবে কৃষি কর্মকর্তা কিছুটা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রথম থেকে ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট তাদের নিউজিমের কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করছিল। তবে পরীক্ষামূলক ব্যবহারেও ফুলকপির ক্ষতি দেখে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘নিউজিমেই ক্ষতি নিশ্চিত হয়ে কৃষক ও ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসি। সেখানে কৃষকেরা বিঘাপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে দাবি করেন। কিন্তু ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট বিঘাপ্রতি দিতে চাচ্ছিল ৪০ হাজার টাকা। ওই সময় আমি কৃষকদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। ফলে ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা করে নির্ধারিত হয়। ছত্রাকনাশকে সমস্যা ছিল বলেই কোম্পানি এতগুলো টাকা দিল, নইলে তো দিত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই অর্থে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব না। এটা দেয়া যেন তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তারপরও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কৃষি অফিসের একটা প্রতিবেদন ছিল। একটা যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ কৃষকেরা পেয়েছেন। এটা দিয়ে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বুধবার আলোচনায় সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার কৃষকেরা টাকা পেয়েছেন।’
বুধবার ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার সময় ছিলেন ব্লেসিং গ্রুপের হেড অব বিজনেস মো. আল-আমিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও চাইনি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। এই পণ্যটি অতীতে ব্যবহার করে অনেকে ভালো ফল পেয়েছেন। পণ্যটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। কোনো সমস্যা পেলে এটা আর বাজারজাত করবো না।’