তিন বছর ধরে দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করছেন মাসুদ রানা। বিগত বছরগুলোতে ভালোই মুনাফা পেয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার এই চাষি। তবে চলতি বছর তাঁর বাগানে উৎপাত শুরু করেছে শিয়ালের দল। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার হেলাই গ্রামের এই বাসিন্দা।
চাষি মাসুদ রানার ভাষ্য, প্রতি সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখতে হচ্ছে ২৫-৩০টি ফল ও গাছের ছেঁড়া কাণ্ড মাটিতে পড়ে আছে। গভীর রাতে ঢুকে এভাবে বাগান তছনছ করছে শিয়ালের দল।
এই চাষির মতোই ক্ষতির মুখে পড়ার তথ্য জানিয়েছেন হেলাই গ্রামের শরিফুল ইসলাম, লাভলু, আনিস, কালাম ও জহুরুল ইসলাম। তারা বলেন, সব ড্রাগন-চাষিই শিয়ালের উৎপাতে অতিষ্ঠ। ৮-১০টি করে শিয়াল বাগানে প্রবেশ করে। তারা ক্ষেতের পরিপক্ব ড্রাগন ফল কামড়ে নষ্ট করছে। এ ছাড়া টেনেহিঁচড়ে গাছও ভেঙে ফেলছে। এ অবস্থায় তারা দিশেহারা। ক্ষেত পাহারা দিতে অনেকের রাতের ঘুম হারাম। প্রতিকারের পথ খুঁজে না পেয়ে চাষিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়েও গেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে ৩২৮ হেক্টর জমিতে। বছরে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন ফল। গুণেমানে ভালো হওয়ায় সারাদেশে এখানকার ফলের চাহিদাও রয়েছে। চাষিরা জানান, শিয়াল প্রতিরোধে কেউ বাঁশের চটার বেড়া দিচ্ছেন; কেউ জাল বসিয়েছেন। তবে উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না। পৌরসভার চাচড়া, শিবনগর, কাশিপুর, চাপালি গ্রামের চাষিরাও একইরকম তথ্য জানিয়েছেন।
চাষিরা জানান, শিয়াল হত্যা বন্য প্রাণী নিধন আইনে অপরাধ। যে কারণে তারা ফাঁস জাল বা বিষ দেওয়ার পথে হাঁটতে চান না। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের কোনো পথও পাচ্ছেন না। হতাশা ঘিরে ধরেছে তাদের।
এ বিষয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ ড্রাগন-চাষি কল্যাণ সমিতির নেতা ও অপ্সরা এগ্রোর পরিচালক সাব্বিরুল ইসলাম এবং সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম ডনের সঙ্গে। তারা বলেন, এ বছর বাগানে শিয়ালের উৎপাত অনেক বেশি। বন্য প্রাণী হত্যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তাই শিয়াল প্রতিরোধে বেগ পেতে হচ্ছে। তারা চাষিদের বাগানে আলো ও আওয়াজের ব্যবস্থার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাতে পাহারা দিতেও বলছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল আলম রনি বলেন, শিয়াল ড্রাগন ক্ষেত নষ্ট করছে– এ বিষয়ে চাষিরা জানিয়েছেন। এ সমস্যার সমাধান কীভাবে পাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবছি। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।