ঢাকা   মঙ্গলবার
২৬ নভেম্বর ২০২৪
১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোপণের পর আলুর বীজে পচন, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১১ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২১:৫২, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

রোপণের পর আলুর বীজে পচন, দুশ্চিন্তায় কৃষক

এবার চার বিঘা জমিতে বিনা-৭ জাতের আলুর বীজ রোপণ করেছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার শান্তির বাজার এলাকার কৃষক জিল্লুর হাসান। কিন্তু সেই বীজের চার ভাগের তিন ভাগই মাটির নিচে পচে গেছে। একই অবস্থা কৃষক নজরুল ইসলামের। তাঁর জমিতে রোপণ করা আলুর বীজও পচে গেছে। আবার নতুন করে হালচাষ করে বীজ রোপণ করতে হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে দ্বিগুণ।

শুধু জিল্লুর ও নজরুলের নন, ওই এলাকার বেশির ভাগ কৃষকেরই এবার একই অবস্থা। তাদের অভিযোগ, নিয়ম থাকলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের মাঝে আলুবীজ সরবরাহ করেনি। তারা বাধ্য হয়ে বেসরকারিভাবে বীজ কিনে এই ক্ষতির মুখের পড়েছেন। এ অবস্থায় কৃষক দুশ্চিন্তায়। তারা বলছেন, বিএডিসি ও ডিলাররা বীজ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিএডিসির বীজ বিক্রি হচ্ছে।

উপযোগী মাটি হওয়ায় দিনাজপুর সদরের উলিপুর, মাশিমপুর, আউলিয়াপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, গৌরীপুর, মুরারীপুর, শান্তির বাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি আগাম আলুর আবাদ করা হয়। কিন্তু আবেদনের পরও ওই সব এলাকার কৃষকদের বীজ সরবরাহ করে না বিএডিসি। এবার মুন্সীগঞ্জ, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেসরকারি বীজ কিনে লাগিয়েছেন কৃষক। কিন্তু সেই বীজ মাটিতে পচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই এক জমিতে দু’বার করে বীজ লাগিয়েছেন। কেউ কেউ দ্বিতীয়বারের মতো বীজ রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, প্রতিবছর সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সানসাইন, কারেজ ও লেডিরোসেটা, সান্তানা, কুইনএনি, সেভেন ফর সেভেন, মিউজিকা ও গ্যানোলা জাতের আলুর বীজ কৃষক ও ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। এ বছর কৃষক পর্যায়ের জন্য বিভিন্ন প্রকার ও গ্রেডভেদে সর্বনিম্ন ৪৯ থেকে ও সর্বোচ্চ ৬২ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু জেলার অধিকাংশ বিএডিসির ডিলার সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বেশি দামে বীজ বিক্রি করছে। এতে কৃষক বাধ্য হয়ে বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে নিম্নমানের বীজ কিনে রোপণ করছেন।

জিল্লুর হাসান বলেন, বিএডিসির আলু তো আমরা চোখে দেখিনি, নামে শুনি। বাইরে থেকে বিনা সেভেন জাতের বীজ কিনে লাগিয়েছিলাম। কিন্তু চার বিঘার মধ্যে তিন বিঘা জমির আলুই পচে গেছে। এখন নতুন করে বীজ রোপণ করতে হবে। কিন্তু টাকা পাব কোথায়?

নজরুল ইসলাম বলেন, হালচাষ করে, সার দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে আলুর বীজ লাগিয়েছি। ৫ বস্তা আলুর বীজ লেগেছে। বেসরকারি বীজ ৩ হাজার ৫০ টাকা বস্তা কিনেছি। কিন্তু রোপণের পর মাটির ভেতরে আলু পচে গেল। সেই জমিতে আবারও ৩ হাজার ২৫০ টাকা বস্তা দরে কিনে বীজ লাগিয়েছি। এক জমিতে দু’বার বীজ রোপণ করেও গাছ ঠিকভাবে গজায়নি।

গৌরীপুর এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ভালো বীজ দরকার। কিন্তু কোনো মৌসুমেই আবেদন করেও বিএডিসির বীজ পাই না। ৬২ থেকে ৬৪ টাকার কেজি দরের বীজ কিনতে হচ্ছে ৮২ টাকা দরে।

কৃষি উদ্যোক্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভালো মানের বীজ না পাওয়ায় আলু পচে যাচ্ছে। বিএডিসির ডিলাররা বেশি দামে বীজ বিক্রি করছেন। কৃষকদের জন্য বিএডিসি তৈরি হলেও কৃষক উপকৃত হচ্ছেন না। ভালো মানের বীজ না পেলে কৃষককে আলুর আবাদ ছেড়ে দিতে হবে।

বিএডিসি (বীজ বিপণন) দিনাজপুরের উপপরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, গত ৩ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫১৩ টন আলুর বীজ ডিলারদের দেওয়া হয়েছে। 

ডিলাররা কেন বেশি দামে বীজ বিক্রি করছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। কোনো কৃষক আমাকে বিষয়টি জানাননি। আর অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রির বিষয়টি কে মনিটর করবে, তা আমার সঠিকভাবে জানা নেই। আমার কাজ শুধু বীজ বিক্রি করা। সূত্র: সমকাল

সর্বশেষ