বগুড়া সদরের শাখারিয়া এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন ৪৩ শতক জমিতে করেছিলেন আগাম আলুর আবাদ। নভেম্বরের শেষে জমি থেকে নতুন আলু তুলতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করেন বীজ। তবে আলুবীজ বপনের দুই দিন পর থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যায়। কোনো রকমে পানি বের করার ৬ দিনের মাথায় ফের বৃষ্টি নামে। পচে যায় সদ্য গজানো সব গাছ। ১০ দিনের মধ্যে ক্ষতি হয় প্রায় ২৭ হাজার টাকা।
কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরই আগাম আলুর চাষ করি। এই আলু নভেম্বরের শেষের দিকে বিক্রি করে বেশ লাভ হয়। তবে এবার বীজ রোপণের পর দু’দফা গাছ পচে যাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে।
একই অবস্থা জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর এলাকার কৃষক বাদশা মিয়ার। তাঁর এক বিঘা জমিতে আলুর চারা গজানোর পর তিন দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে সব পচে যায়। বাদশা মিয়া বলেন, এই আলু বিক্রি করে তিনি রবি ফসল করতেন।
বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসমত জাহান বলেন, তাঁর উপজেলায় আগাম আলুক্ষেত নষ্ট হয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলার শাজাহানপুর, শেরপুর উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকায় কৃষকরা বপনের জন্য বীজ আলু কেটে জাগ দিয়েছিলেন। টানা বৃষ্টির কারণে জমিতে রোপণ করতে না পারায় ঘরেই সেই বীজে চারা গজিয়ে নষ্ট হয়েছে। পরে নামমাত্র দামে তা বাজারে কেজি দরে বিক্রি করতে হয় তাদের।
সুজাবাদ এলাকার কৃষক মাহবুব আলম জানান, বীজ আলু জাগ দেওয়ার ৫ থেকে ৭ দিনের মাথায় রোপণ করতে হয়। তিনি ১৫ মণ বীজ আলু ঘরে জাগ দিয়েছিলেন। তবে লাগাতার বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় আর রোপণ করতে পারেননি। পরে ওই কাটা আলু বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, একদিকে অসময়ে বৃষ্টি, অন্যদিকে গরম– এতে আলুর আবাদে বড় ধাক্কা লেগেছে। ইতোমধ্যে জেলায় আগাম লাগানো সাড়ে ৩০০ হেক্টর জমির আলু গাছ পচে গেছে। নষ্ট হয়েছে জাগ দিয়ে রাখা সাড়ে ৬০০ টন আলুর বীজ। এমন আবহাওয়া থাকলে আলুর উৎপাদনে এবার ধস নামবে বলে আশঙ্কা তাঁর।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, জেলায় এ বছর ৫৫ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ টন। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪০ হাজার ৫০০ টন। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব নয়।
কৃষি অধিদপ্তর বগুড়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, লাগাতার বৃষ্টি আর গরমে জমিতে আলুর গাছ যেমন পচেছে, তেমনি ঘরে বীজ আলুও নষ্ট হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, ‘আগাম আলুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। করণীয় সম্পর্কে পরামর্শও দিচ্ছি।’