বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললেই উঠে আসছে রাশি রাশি জেলিফিশ। সাগরে জেলিফিশের এমন প্রাচুর্যকে বলা হয় ‘জেলিফিশ ব্লুমিং’। এই ব্লুমিং একটা পর্যায় পর্যন্ত স্বাভাবিক হলেও এখন জাল ভর্তি কেবলই জেলিফিশ, তাই কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে সামুদ্রিক মাছের ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন আর দূষণের কারণেই এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সাগরে।
গভীর সমুদ্রের অজানার সাথে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরাই অনেকের পেশা আর নেশা। কিন্তু বিচিত্র সামুদ্রিক প্রাণীদের আচরণে ভেস্তে যাচ্ছে সব। সাগরে জাল ফেললেই মাছের বদলে উঠে আসছে জেলিফিশ।
সাধারণত শীতকাল শেষে গরম পড়তে শুরু করলে সাগরের উপরিভাগের লবণাক্ততা বেড়ে যায়, সেসময় বাড়ে জেলিফিশের উপদ্রব। যাকে জেলিফিশ ব্লুমিং বলা হয়। কিন্তু এবারে জাল ফেললে ৮০-৯০ ভাগই জেলি ফিশ, বঙ্গোপসাগরে মাছের দেখাই মিলছে না ।
একবারের সমুদ্রযাত্রায় একটি মাছ ধরার ট্রলারের ব্যয় হয় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। জেলিফিশের কারণে খরচই তুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে, অনেকেই সাগরে মাছ ধরা বাদ দিয়ে ফিশিং বোট নোঙর করে রেখেছেন।
বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মসিউর রহমান চৌধুরী বলেন, গত ৩০-৪০ বছরে এত জেলিফিশ দেখিনি। হয়তো বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছে। যেটা সাময়িক ছিলো। প্রায় দুই মাস টানা এমন ভাবে জেলিফিশ উঠছে যখন আমাদের মাছ ধরার পিক টাইম।
তিনি বলেন, আমাদের জাহাজগুলো ঘাটে রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
শুধু বঙ্গোপসাগরেই নয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই বেড়েছে জেলিফিশের প্রজনন। সাগরের পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, দূষণের কারণে পানির অক্সিজেন কমে যাওয়া আর জেলিফিশের খাদক কচ্ছপের সংখ্যা কমে যাওয়াই এর মূল কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. কে এম আজম চৌধুরী, চেয়াম্যান, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে গেলে জেলি ফিশের প্রোডাকশন বেড়ে যায়। তখন সমুদ্রে টোটাল ইকোসিস্টেমে সমস্যা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে, যে কারণে অক্সিজেনে স্বল্পতা হচ্ছে। জেলিফিশ স্বল্প অক্সিজেনে বাঁচতে পারে। কিন্তু অন্যরা বাঁচতে পারে না। তখন তাদেনর আধিক্য বেড়ে যায়।
সমুদ্রের বিচিত্র প্রাণীদের বাস্তুসংস্থান নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিটি দেশের নিজস্ব ওশান ফোরকাস্টিং সিস্টেম থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই গবেষক।